পরিবার পরিজনের মুখে হাসি ফুটাতে ২০ বছর যাবৎ ঈদে গ্রামের বাড়ি যান না ৭০ বছরের বৃদ্ধ কেয়ারটেকার আবুল কাশেম। ঈদের সময় বেতন-বোনাস বাবদ যে টাকা পয়সা পান তা থেকে খাওয়ার খরচ রেখে বাকি সব টাকা গ্রামে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পাঠিয়ে দেন। ঈদের দিনের জন্য আধা কেজি মাংস কিনে এনে রান্না করে খান। গত দুই দশক যাবৎ এই হলো আবুল কাশেমের ঈদ। শনিবার ঈদের দিনেও এ রুটিনের ব্যতয় ঘটেনি। শুক্রবার সকাল ১১টায় লালবাগের তিন নম্বর নতুন পল্টন লাইনের নির্মানাধীন বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায় এক কোনায় গ্যাসের চুলায় রান্না চড়িয়েছেন আবুল কাশেম। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, শুক্রবার রাতে ২০০ টাকা দিয়ে আধা কেজি গরুর মাংস কিনে এনেছেন। এখন গ্যাসের চুলায় একটি টিনের কড়াইতে মাংস ও অন্য একটি ছোট পাত্রে একপট চাউলের ভাত চড়িয়েছেন। এতেই তার দুবেলার খাবার হয়ে যাবে।স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে রেখে কেন একা একা ঈদ করছেন এ প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ বলেন, গ্রামে স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। নিয়মিত বেতন ভাতা থেকে গ্রামে না পাঠালে ওরা উপোস থাকবে। এবারের ঈদে আগেই বেতন বোনাসের টাকা পাঠিয়ে হাত একেবারে খালি। আসা যাওয়ার ভাড়া না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও বাড়ি যেতে পারেননি। তবে সামনের মাসের বেতন পেয়ে তিনি গ্রামে যাবেন বলে জানান।লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানার কাঞ্চনপুর গ্রামের বৃদ্ধ আবুল কাশেম একই গ্রামের এক পরিচিত ড্রাইভার তাজেলের (যে মালিকের বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করছেন) মাধ্যমে গত ২০ বছর আগে ৩ নম্বর বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ওই সময় বেতন ছিল মাসিক ১৫০০ টাকা। চাকরির বয়স বহু বছর হলেও সেই তুলনায় বেতন খুব একটা বাড়েনি। বর্তমানে বেতন পাচ্ছেন ৭০০০ টাকা মাত্র।এবারের ঈদে বেতন ও বোনাস মিলিয়ে মোট ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। স্ত্রী ছেলে মেয়েদের জন্য আট হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। বাকি দুই হাজার টাকা মাসের খাবার খরচ হিসেবে রেখেছেন। নির্মানাধীন বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি দৈনিক ১২ ঘণ্টা ডিউটি করেন জানিয়ে আবুল কাশেম বলেন, বয়স হইছে, শরীর আর কুলায়না, তবুও কাজ করতেই হয়। একটি ছেলে লক্ষীপুরের একটি ডিগ্রী কলেজে পড়াশুনা করছেন। ছেলেটির পড়াশুনা শেষে একটি চাকরি হলে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন। ইট পাথরের এই নগরীতে এখন আর ভাল লাগেনা কিন্তু সংসারের চাকা সচল রাখতে তাকে কষ্ট করে হলেও ডিউটি করতেই হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় আবুল কাশেম অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষের শুধুমাত্র একজন। পরিবার পরিজনের মুখে হাসি ফুটাতে গ্রাম ছেড়ে তার মতো অনেকেই শহরে বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদের এই নিরব সংগ্রাম ও মনোকষ্টের কথা নগরবাসীর অনেকেই জানেননা।এমইউ/এসকেডি/পিআর
Advertisement