খেলাধুলা

সেই মিডল অর্ডারের দুর্বলতা উন্মোচিত হলো আজ

‘এভরি ডে ইজ নট সানডে’-সপ্তাহের সব দিন সমান নয়। এটা যদিও প্রবচন। তবে সেটা শুধু কথার কথা নয়। বাস্তবেও যার প্রতিফলন অনেক। ক্রিকেটে এ প্রবচনের ব্যবহার অনেক পুরণো। সব দিন সমান নয়। বা সব দিন এক নয়- এমন কথা শোনা যায় প্রায়ই।

Advertisement

এটা আসলে এক রকমের সাবধানবাণী। যে সতর্কবার্তা মিলেছিল ৪৮ ঘন্টা আগে জিম্বাবুয়ের সাথে ম্যাচেই। জিম্বাবুয়ের সাথে আগের ম্যাচে শেষ অবধি ৯১ রানের বড় জয় ধরা দিলেও খেলা শেষে একটি কথা উচ্চারিত হয়েছে অনেকের মুখেই, ‘তামিম আর সাকিবতো সব দিন ভালো খেলবেন না। তাদের ব্যাট প্রতিদিন কথা বলবে না। সব খেলায় রানের ফলগুধারাও বইবে না। শিরোপা জিততে হলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের এগিয়ে আসতে হবে। মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসিরদের রান করতেই হবে। ’

গত পরশু জিম্বাবুয়ের সাথে ম্যাচের পর ‘মিডল অর্ডারে দূর্বলতা যেন চাঁদের গায়ে কলঙ্ক’- শিরোনামে জাগো নিউজে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। যার শেষ অনুচ্ছেদটা ছিল এমন- দুই বোলার সানজামুল আর রুবেল মিলে শেষ ৪৬ বলে ৪৬ রান যোগ করে স্কোরবোর্ডটাকে একটা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন। অন্যদিন তা নাও হতে পারে।

ফাইনালের আগে মিডল ও লেট অর্ডারের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতেই হবে। প্রতিদিন তো আর তামিম বিগ ফিফটি হাঁকাবেন না। সাকিবও পর পর বড় ইনিংস খেলতে পারবেন না। কাজেই মিডল অর্ডারে অন্তত দুজনার ব্যাটে লম্বা ইনিংস দরকার। এমন কাঁচভঙ্গুর মিডল অর্ডার নিয়ে শেষ হাসি হাসা যাবে না।

Advertisement

ফাইনালে কি হবে? তা জানতে আরও ৪৮ ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে তার আগে আগে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেরে বাংলায় ৮২ রানে অলআউট হবার দিনে মিডল অর্ডারের সে দুর্বলতা , ফাঁক-ফোকর ও ছিদ্রটাই যে বেশি করে উন্মুক্ত হলো!

এ সিরিজে দারুণ খেলতে থাকা তামিম আর সাকিব আজই প্রথম রান পাননি। আর ঠিক সেদিনই চরম ব্যাটিং বিপর্যয়।

এবারের তিন জাতি আসরে ওপেনার তামিম যেন ‘রান মেশিন।’ আগের তিন ম্যাচেই ফিফটি (৮৪+৮৪+৭৬ = ২৪৪ রান), গড় ১২২.০০ আর ৮১.৩৩ স্ট্রাইকরেট।

তিন নম্বরে উঠে আসা সাকিব পর পর দুই ম্যাচে হাফসেঞ্চুুরি হাঁকিয়ে (৩৭+৬৭+৫১ ) ৮২.০১ স্ট্রাইকরেট ও ৫১.৬৬ গড়ে করেছিলেন ১৫৫।

Advertisement

প্রায় তিন বছর পর আবার লাল সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামা ওপেনার এনামুল হক বিজয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচে মাত্র ১ রানে আউট হলেও তার আগের দুই ম্যাচে হাত খুলে ১৯ ও ৩৫ রানের দুটি ইনিংস উপহার দিয়েছেন। প্রথমটির স্ট্রাইকরেট ছিল ১৩৫.৭১ । আর পরের বারের স্ট্রাইকরেট ছিল ৯৪.৫৯।

চার নম্বরে মুশফিক প্রথম দিন খুব অল্প সময় মাত্র ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। পরের ম্যাচে সুযোগ পেয়েই জ্বলে ওঠা এবং ঠিক ফিফটি (৬২) করে ফেলা। তৃতীয় খেলায় ১৮ রানে আউট হলেও তিন খেলায় ৪৭.০০ গড় আর ৯৪.০০ স্ট্রাইকরেটে মুশফিকের রান ছিল ৯৪।

সে তুলনায় মাহমুদউল্লাহ (২৪+ ২), সাব্বির ( ২৪*+ ৬) ও নাসিরের ( ০+২ ) ব্যাট অনেক নিষ্প্রভ, অনুজ্জ্বল। আগের ম্যাচগুলোয় কিছুই করতে পারেননি।

বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তাদের ব্যর্থতায় এক পর্যায়ে ২৩ রানে পতন ঘটে ৬ উইকেটের। ভাগ্য ভাল, টপ অর্ডারে তামিম ৭৬ আর সাকিব ৫১ রানের এক জোড়া ভাল ইনিংস খেলেছিলেন। তারপর মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসিরের খারাপ খেলাটা করুণ পরিনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। তিন জেনুইন বোলার সানজামুল, মোস্তাফিজ আর রুবেলরা শেষ দিকে বুক চিতিয়ে লড়ায় মুখ রক্ষা হয় সেদিন।

কিন্তু আজ? এদিন প্রথম রান নেই তামিম (৫) আর সাকিবের ( ৮) ব্যাটে। প্রথম ১০.৪ ওভারে ৩৪ রানে আউট আরও দুই টপ অর্ডার এনামুল হক বিজয় (০) ও মাহমুদউল্লাহ (৭)। এমন বিপর্যয়ের দিনেই যে মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসিরের ভাল খেলা ছিল খুব জরুরি। কিন্তু দরকারের দিনে এ তিনজন আবার ব্যর্থতার ঘানি টানলেন।

জয়-পরাজয় যেমন খেলার স্বাভাবিক ধর্ম। একই ভাবে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান আউট হবেন ,সেটাও স্বাভাবিক। লঙ্কান ফাস্টবোলার সুরাঙ্গা লাকমাল বেশ সমীহ জাগানো বোলিং করে তিন উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন। তার ডেলিভারিতে আউট হলে কথা ছিল।

কিন্তু আজ দলের বিপদে মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসিরের কেউ ভালো বলে আউট হননি। তিনজনের কারো ব্যাটিংয়ে দায়িত্ববোধের ‘দ’ ও ছিল না। তাদের আউটের ধরণ ছিল চরম দৃষ্টিকটু।

মাহমুদউল্লাহ আউট হলেন লাকমালকে পুল খেলতে গিয়ে। তার পুল খেলার প্রবণতা বেশি। এটা কম্পিউটার এনালিস্টের কল্যাণে সব দলের পেস বোলাররাই জেনে গেছেন। ফলে তারা মাহমুদউল্লাহকে খাটো লেন্থে বল ফেলে পুল খেলতে প্রলুব্ধ করেন। মাহমুদউল্লাহও সেই ফাঁদে পা দিয়ে অহরহ উইকেট বিসর্জন দিচ্ছেন। আজও তাই হলো। লাকমালের ডেলিভারিতে পুল করা মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ দিলেন ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে।

তারপর আউট হলেন সাব্বির। ততক্ষণে চার ফ্রন্টলাইনার সাজঘরে। দল ধুঁকছে। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৫৭ । কোথায় শুরুর ধাক্কা সামলাতে রয়ে সয়ে খেলবেন, তা না উল্টো রানের নেশায় যেন পেয়ে বসলো সাব্বিরকে। তার মতি গতি বুঝেই বোলার থিসারা পেরেরা মিড অনকে ৩০ গজের ভিতরে এনে একটু ওপরের দিকে বল ফেললেন।

১৭ নম্বর ওভারের প্রথম বলটিতে বাঁহাতি পেসার থিসারা পেরেরার বলে উইকেট ছেড়ে মিড অনের ওপর দিয়ে মারতে গেলেন সাব্বির। ৩০ গজের ভিতরেই ক্যাচ উঠলো।

আর নাসিরের আউট দেখে যারপরনাই হতাশ অতিবড় ভক্তও। দুষ্মন্ত চামিরার লেগস্টাম্পের অন্তত ছয় ইঞ্চি বাইরের বলকে তাড়া করে আউট নাসির। অবধারিত ওয়াইড ডেলিভারি ছিল সেটা। নাসির পুল আর ফ্লিকের মাঝামাঝি একটা শট খেলতে গেলেন , ব্যাটের ভিতরের কানায় লেগে বল চলে গেল লঙ্কান কিপার ডিকভেলার গ্লাভসে।

এরই সঙ্গে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সম্ভাবনাটুকুরও ইতি ঘটলো। ফাইনালের আগে আরও একবার উন্মুক্ত হলো বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের দুর্বলতা। তাতে ৮২ রানেই অলআউট টাইগাররা। এমন ব্যর্থতায় শুধু উল্কার বেগে এগিয়ে চলা মাশরাফি বাহিনীর জয়রথই থামলোনা , চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ও ঘটলো।

আজকের ব্যাটিং বিপর্যয়ে বার্তা একটাই- ২৭ জানুয়ারি শেরে বাংলায় ফাইনালে মিডল অর্ডারের জ্বলে ওঠা ছাড়া পথ নেই।

এআরবি/এমএমআর/আইআই