জাতীয়

রাজধানীজুড়েই তীব্র গ্যাস সঙ্কট

রাজধানীর মুগদার মান্ডা এলাকার বাসিন্দা নূরে ফাতেমা আশা। গ্যাস সঙ্কট নিয়ে তিনি বললেন, ‘গ্যাস সঙ্কটের বিষয়ে কিছু বলার নেই। সকালে গ্যাসের ফ্লো চলে যায়, সেই ফ্লো আবার ফিরে আসে রাতে। দিনব্যাপী গ্যাস থাকে তবে গ্যাসের চাপ খুবই কম। সেখানে চুলা প্রায় জ্বলে না বললেই চলে। এভাবে রান্না করা যায় না। পুরো শীতের সময়টা এমন যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে রাতেই রান্না করে রাখতে হয়।’

Advertisement

এ অবস্থা শুধু মুগদা এলাকায়ই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় সকাল থেকেই গ্যাস থাকে না। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে হতে বিকেল গড়ায়। রাজধানীর গ্যাস সঙ্কট অনেক আগের বিষয়। তবে হঠাৎ করেই তীব্র গ্যাস সঙ্কটে পড়েছে রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষ। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের সঙ্কট বাড়ছে। চুলা জ্বলছে টিম টিম করে। অনেক এলাকায় চুলা জ্বলছে না বললেই চলে। বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সঙ্কট তীব্র। ফলে বাধ্য হয়ে রাতেই এসব এলাকার বাসিন্দাদের রান্নার কাজ সেরে নিতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকা এই তিন অঞ্চলে গ্যাসের সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মোহাম্মদপুর, বছিলা, আদাবর, পশ্চিম আগারগাঁও, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, বনশ্রী,রামপুরা, মগবাজার,মুগদা, মান্ডা,পশ্চিম ধানমন্ডি, লালবাগ, সোবহানবাগ, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় তীব্র গ্যাস সঙ্কটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাজধানীর কাজীপাড়ার বাসিন্দা তবিবুর রহমান একজন ব্যবসায়ী। ভাড়া বাসায় থাকলেও তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শেওড়াপাড়ায় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন। আগে প্রতিদিন দুপুরে খেতে কাজীপাড়ার বাসায় যেতেন তিনি কিন্তু ইদানীং দুপুরের খাবার তাকে হোটেলেই খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে দিনের বেলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। লাইনে যে পরিমাণ গ্যাস আসছে তা দিয়ে রান্না করা সম্ভব নয়, কারণ গ্যাসের চাপ খুব কম। চুলা জ্বলে টিমটিম করে। সে কারণে আমার পরিবারের সদস্যরা রাতে রান্না করে নেয়। সেগুলোই সকালে ও দুপুরে খায় তারা, যে কারণে আমি আর দুপুরে বাসায় খেতে না গিয়ে হোটেলেই খাই। তিনি বলেন, আমাদের বাসার আশেপাশে প্রায় সব বাসায়ই একই সমস্যা। এ কারণে বেশির ভাগ বাসায় একবারেই রাতে রান্না হয়।

Advertisement

শীতের কারণে এ সমস্যা তীব্র হয়েছে জানিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ডিভিশন) প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম বলেন, আসলে শীতের সময় গ্যাসের ব্যবহার অনেক গুণে বেড়ে যায়। সবাই গোসলের পানি ও খাবার গরম করে যার ফলে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণের তুলনায় ব্যবহার বেড়ে যায়। গ্যাস চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতিই সমস্যার মূল কারণ।

এলাকা ভেদে গ্যাস সঙ্কটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জনবহুল এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট বেশি দেখা দিয়েছে। কারণ যে এলাকায় যত মানুষ বেশি, বা চুলার সংখ্যা বেশি সে এলাকায় এই শীতকালে গ্যাসের সঙ্কট বেশি। অর্থাৎ লাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে আগে যারা আছেন তারা ব্যবহার করে ফেলছেন ফলে লাইনের পরের দিকে যারা আছেন তারা তুলনামূলক কম গ্যাস পাচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতিই সমস্যার মূল কারণ। তবে আশা করা যাচ্ছে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ভূতাত্ত্বিক জরিপ ৫৭০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ ১২,৮০০ কিলোমিটার এবং ত্রিমাত্রিক জরিপ ২৮৪০ বর্গ কিলোমিটার সম্পন্ন করা হবে। গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধির জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাপেক্সে কর্তৃক ২০২১ সালের মধ্যে মোট ১০৮ টি কূপ খনন (৫৩ টি অনুসন্ধান কূপ, ৩৫ টি উন্নয়ন কূপ) খনন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এছাড়া অপচয় ও সিস্টেম লস রোধ, ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানি ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি লক্ষে সব আবসিক গ্যাস গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হবে।

এএস/ওআর/এমবিাআর/জেআইএম

Advertisement