রাজধানীর যানজট কমবে তো দূরের কথা বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। যানজট কমানোর নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্মিত হয়েছে উড়াল সড়ক। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। দীর্ঘ যানজটে অচল থাকছে দেশের রাজধানী। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসনসহ নানাক্ষেত্রে। এ অবস্থায় ঢাকাকে সচল রাখতে নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগোতে হবে।
Advertisement
নগরবাসীর পথ চলাচল নিশ্চিত ও রাজধানীর দুঃসহ যানজট থেকে রক্ষা পেতে হলে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে হবে। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। নানা সময় নির্দেশনায়ও এসেছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুন ও ফুটপাথে সকল প্রকার অবৈধ দোকান উচ্ছেদের নানা কথা হয়েছে। একই সঙ্গে ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে স্থাপিত রাজনৈতিক কার্যালয় দ্রুত সরিয়ে নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। একদিকে চলে উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে আবার দোকান বসে যায়-এভাবে চলে উচ্ছেদ-দখল খেলা।
রাজধানীর ফুটপাথে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর মোট দুই হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অনেকাংশই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দখলে। বিশেষ করে ঢাকার ফুটপাথগুলো দখলে থাকায় যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষজন। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া।
বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। দখল-দূষণে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থা। এছাড়া যানজট, যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ট্যানারি বর্জ্য, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিন্মমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ্ব এ শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।
Advertisement
দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এক জগাখিচুরি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার। অথচ ঢাকার রয়েছে চারশ বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য। ঢাকা শুধু একটি শহর নয় এর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। হারিয়ে যাওয়া সেসব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। ঢাকাকে বাস উপযোগী ও সচল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে যানজট দূর করতে নিতে হবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/জেআইএম