সাফল্যকে মানদণ্ড ধরলে তিনিই এখন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। সব সময়ের সফলতম উইলোবাজ। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের টপ স্কোরার তামিম ইকবাল। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রান পূর্ণ করা ব্যাটসম্যানের নামও তামিম। তবে ক্রিকেটার তামিম এমন কৃতিত্ব আর অর্জনকেও খুব বড় করে দেখতে নারাজ।
Advertisement
তার অনুভব, উপলব্ধি-আমি পুরস্কার চাই না। চাই স্বীকৃতি। আজকের খেলার আগে গতকাল প্রেস মিটে কথা বলতে এসেও বলেছিলেন , ‘আমি রিওয়ার্ড চাই। অ্যাওয়ার্ড চাই না।’
আজ মঙ্গলবার রাতে ম্যাচ সেরা হবার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে এসেও ঠিক একই কথা তামিম ইকবালের মুখে, ‘হ্যাঁ, ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে ভালো লাগছে। আজও আমার ও সাকিবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই (ম্যাচ সেরার পুরস্কারের জন্য) ছিল। কারণ সেও হাফ সেঞ্চুরি করেছিল এবং শুরুতেই দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিল।’
বন্ধু সাকিবের অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সের কারণে আগের দুই ম্যাচে পর পর ৮৪ রান করে দলের টপ স্কোরার হলেও ম্যাচ সেরা পুরস্কার জোটেনি কপালে। তবে তা নিয়ে তেমন আক্ষেপও ছিল না।
Advertisement
বড় মনের তামিম আজ ম্যাচসেরা হয়েও মনে করেন, সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পারতেন। দিন শেষে এ কথাটি ঘুরিয়ে বলেছেন তামিম, ‘আজ আমি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেও এটা যদি ওর (সাকিব) কাছেও যেতো আমি মন খারাপ করতাম না। কারণ আমি মনে করি সেও সমানভাবে এটার যোগ্য।’
আজকের উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য কেমন ছিল? ভালো খেলেও আউট হয়ে যাওয়া নিয়ে কিছু বলতে বলা হলে তামিম বলেন, ‘আমরা সত্যি বলতে সেরাটা খেলতে পারিনি। কারণ উইকেটটা সহজ ছিল না। প্রথম ১০-১৫ ওভার বলের সিম মুভমেন্ট হচ্ছিল। এরপর যখন স্পিনাররা আসলো, তখন ব্যাট করাটা আসলেই অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল। একটা বল টার্ন করছিল তো পরের বলটি সোজা আসছিল। আমার কাছে মনে হয় যে আমি ও সাকিব অনেক ভালো খেলেছি। যদিও আমরা দুজনে অনেক বেশি রান করতে পারিনি, তারপরও আমরা উইকেট অনুযায়ীই ব্যাট করতে পেরেছি।’
তামিম মানছেন, আউটের জন্য তিনি নিজেই দায়ী। আউট হওয়ার ধরনের চেয়ে আউট হওয়ার সময়টা তাকে পোড়াচ্ছে বেশি। তাই তো মুখে এমন কথা , ‘হ্যাঁ, আমি অনেকক্ষণ চাচ্ছিলাম যে একটু আক্রমণাত্মক খেলি। কারণ আমি ফিফটি করতে চাচ্ছিলাম, তখন আসলে উইকেটটা লুজ হচ্ছিল। আর আমি যে সময়ে মারতে গিয়ে আউট হলাম, ওটা আসলে সঠিক সময় ছিল না বলে আমার মনে হয়। আরও পাঁচ-ছয়টা ওভার যদি আমি পার্টনারশিপ বিল্ড করে যদি তারপর অ্যাটাক করতে যেতাম তাহলে মনে হয় ভালো কিছু হতে পারতো আরও। এরকম করতে পারলে হয়তো আমরা ২৩০-২৩৫ করতে পারতাম। যে শটটা খেলে আউট হয়েছি সেটা ভুলও ছিলো, সময়টাও ঠিক ছিল না।’
তার ব্যাটে ধারাবাহিকতা এখন খুব বেশি। এর পেছনের রহস্য কী? এ প্রশ্নের জবাবে অনেক কথার ভিড়ে তামিম বোঝাতে চাইলেন, ইচ্ছাশক্তি, মানসিক দৃঢ়তা, কঠোর অনুশীলন ও মনোযোগের মিশেলেই তার ব্যাটে নিয়মিত রানের ফলগুধারা বইছে।
Advertisement
তামিমের ভাষায়, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমার মানসিক শক্তি, যেভাবে আমি অনুশীলন করছি, আমার ফোকাস, আমি জানি আমি কী করতে চাই, কতদূর যেতে চাই। আমি সবসময় বলি যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বিশেষ করে প্রথম ২-৩ ব্যাটসম্যানের জন্য প্রথম ২০-২৫ বল সবসময় খুব কঠিন। যখন ২০-২৫ বল খেলে ফেলবেনম তখন আপনি কমফোর্টেবল ফিল করবেন এবং বড় রান করার জন্য এগোতে পারবেন। আমি ওইটাই চেষ্টা করছি। আমি এখন খুব ভালো সময় কাটাচ্ছি তো এটাকে যতদূর পারা যায় বড় করতে চাই। কারণ আপনি কখনই বলতে পারবেন না কখন খারাপ সময় আসবে।’
মিডল অর্ডারে নাসির, সাব্বিররা সুযোগ পেয়েও কিছু করতে পারেননি। তাদের ব্যর্থতায় দল ধুঁকছিল। শেষ দিকে সানজামুল, মোস্তাফিজ ও রুবেল হাল না ধরলে স্কোর ১৭০ ‘এ থেমে যেতে পারতো।
মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তামিম নিজের কাঁধেই সব দায় দায়িত্ব তুলে নেন। নিজের ওপর দায় নিয়ে তামিম বোঝানোর চেষ্টা করলেন, সাব্বির-নাসিরের সামনে সুযোগ ছিল ভালো কিছু করার। তবে সব দিন সবাই ভালো খেলে না। ভালো খেলার সুযোগও প্রতিদিন আসে না। আজ মিডল অর্ডারের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিল রান করার। কিন্তু তারা তা পারেননি। তবে সেই না পারার জন্য তাদের দোষী করতে নারাজ তামিম।
দেশসেরা এই ওপেনার বলেন, ‘এই ধরনের সুযোগের জন্য সব প্লেয়ারই অপেক্ষা করে। আজকে তাদের (সাব্বির-নাসির) সামনে একটা সুযোগ ছিল। আমার কাছে মনে হয়, সাব্বির আসলে দুর্ভাগা। কারণ অসাধারণ ক্যাচে আউট হয়েছে সে। তার খেলা শটটিতে (আউট হওয়া শট) আমি খারাপ কিছুই দেখিনি। নাসির হয়তো হতাশ। পরের ম্যাচগুলোতে হয়তো রান পাবে এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।’
এআরবি/এমএমআর/বিএ