ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের কার্যালয়ের সামনে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুর থেকে ঢাবি উপাচার্য নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।
তারা উপাচার্যকে মুক্ত করে ফের তার কার্যালয়ে নিয়ে যান।
এ সময় উপাচার্যের কক্ষের সামনের করিডোরে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রড নিয়ে তাড়া করে কয়েকজনকে মারধরও করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
Advertisement
এরপর কিছুক্ষণের জন্য অবরোধকারীদের উপাচার্যের দরজা সামনে রেখে সরে গেলেও বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এসে লোহার রড ও লাঠিশোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে হামলা চালায়।
হামলার পর উপাচার্য কার্যালয় থেকে সিনেট ভবনের দিকে যাওয়ার ফটক দিয়ে চলে যেতে চাইলেও সেখানে আরেকদল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হামলার শিকার হয় আন্দোলনকারীরা।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করলে প্রশাসনিক ভবনের ভেতর দিয়ে মূল ফটক হয়ে বেরিয়ে যেতে চান আন্দোলনকারীরা।
কিন্তু ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া করে আন্দোলনকারীদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
Advertisement
এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এছাড়া আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাহাদী, ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির এবং সমাজতান্দ্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রগতি বর্মনও ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ ভিসি স্যারকে উদ্ধার করতে গিয়েছে। এ সময় অবস্থানরত বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে আমরা মীমাংসা করার চেষ্টা করেছি।
সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন জাকির হোসাইন।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর ঢাবি শাখা সভাপতি ইভা মজুমদার বলেন, আমরা নিপীড়নদের বিচারের দাবিতে এসেছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় আমাদের ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা ব্শ্বিবিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পিছনে অব্স্থান করছেন। আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছেন।
এর আগে তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেন তারা। এ সময় এক শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে- অধিভুক্ত ৭ কলেজ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও যৌন নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার, প্রশাসনের করা নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টরের পদত্যাগ।
এর আগে গত রোববার (২১ জানুয়ারি) তিন দফা দাবি আদায়ে আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়ায় আজ আবারও আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
এমএইচ/জেএইচ/আরআইপি