আইন-আদালত

হোমিও চিকিৎসক নিখোঁজ : তিন পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

নিখোঁজ সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জনির নিখোঁজের ঘটনায় জিডি না নেয়ায় কারণে অবহেলার অভিযোগে দুই ওসি এবং এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

আদেশে আদালত বলেছেন, জিডি করতে চাইলে তা নিতে হবে এবং জনির স্ত্রীর এ বিষয়ে আদালতে নালিশি মামলাও করতে পারবেন।

আদেশের বিষয়ে আইনজীবীরা জানান, সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশের মহাপরিচালককে (আইজি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে করা পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

Advertisement

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মতিয়ার রহমান। আদালতে আইন শালিশ কেন্দ্রের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাগুফতা তাবাছ্ছুম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

এ সময় আদালত আদেশে বলেন, মোকলেসুর রহমান জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে পারবেন। এ ছাড়া তিনি ইচ্ছা করলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিখোঁজের ঘটনায় মামলাও করতে পারবেন। আদালত এই মামলায় পর্যবেক্ষণসহ পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি জনি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে।

এর আগে মোখলেসুর রহমান জনির খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী জেসমিন নাহার হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর পিবিআই তদন্ত করে। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশের আইজির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের (খুলনা বিভাগ) বিশেষ পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদারকে প্রধান করে কমিটি করা হয়। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে কমিটি।

Advertisement

মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী জেসমিন নাহার বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাতে শহরের নিউ মার্কেটে গিয়েছিলেন জনি। এ সময় এসআই হিমেল জনিকে আটক করেন। তাকে থানায় তিন দিন রাখা হয়। সে সময় প্রতিদিন থানায় গিয়ে জনিকে খাবার দিয়ে আসতেন জেসমিন। কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে গিয়ে আর স্বামীর দেখা পাননি তিনি। তখন এসআই হিমেল জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও স্বামীর খোঁজ পাননি তিনি। পরে গত বছরের ৬ মার্চ হাইকোর্টে রিট (হেভিয়াস কর্পাস) করেন জেসমিন।

এরপর হাইকোর্ট রুল জারি করে পুলিশকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। দু’দফা আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে জনিকে আটক করেনি বলে জানায় পুলিশ। পরে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ মে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা নিতে সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল্লাহ মাহমুদ তদন্ত শেষে ২৯ জুন হাইকোর্টে এ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন।

ওই প্রতিবেদনে এ ঘটনার সঙ্গে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) আলতাফ হোসেন, সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেল হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য জড়িত আছে মর্মে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে ১৬ জুলাই জনির নিখোঁজের ঘটনা পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করার পদক্ষেপ নিতে আইজিপি নির্দেশ দেন। সে অনুসারে পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে জিডি নিতে সাতক্ষীরার সদর থানার কর্তব্যরতদের অবহেলার কথা উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয়ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

এফএইচ/এনএফ/আরআইপি