সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ্। এক ছেলে অনিক আজিজ স্বাক্ষর, মেয়েও একজন, নাম- সৃষ্টি।
Advertisement
‘সুখের সংসার। ছেলের কোনো আবদারই কখনো অপূর্ণ রাখেননি বাবা। এমনকি কিছুদিন আগে বাবার কাছে একটি পালসার মোটরসাইকেলের আবদার করে ছেলে অনিক। ছেলেকে মোটরসাইকেলটি কিনে দিয়ে আবদারও পূরণ করেছিলেন বাবা।’
জাগো নিউজকে এমনটি বলছিলেন অনিকের ঘনিষ্ট বন্ধু অম্বিক মণ্ডল। দু-তিনদিন আগে অনিকের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার।
স্থানীয়রা বলছিলেন, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন কত অসহায় পরিবারকে। অথচ এখন এমপি নিজেই হয়ে পড়েছেন সান্ত্বনাহীন। কোন ভাষায় তাকে সান্ত্বনা দেবে স্বজনসহ শোভাকাঙ্ক্ষীরা। কারো মুখে যেন ভাষা নেই। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সকলেই।
Advertisement
ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ্
রোববার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীতে ৫ নং ন্যাম ভবনের ৫০৬ নম্বর রুমে নিজের ছেলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে হয় তাকে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিসহ তার পরিবার। মা নাসরিন খান লিপি হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ। একমাত্র প্রাণপ্রিয় ছেলেকে হারিয়ে পরিবারটি যেন অসহায় বাকরুদ্ধ।
বিকেল সাড়ে ৪টায় হেলিকপ্টারযোগে মরদেহ নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরায়। শুরু হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা নাসরিন খান লিপি, বোন সৃষ্টিসহ বাবা এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ্।
সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার গণমুখী মাঠে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শেষ হয় নামাজে জানাজা। যেখানে জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জানাজা শেষে অনিক আজিজ স্বাক্ষরকে দাফন করা হয় রসুলপুর গোরস্থানে।
Advertisement
জানাজায় এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ্ কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুধু বলেন, আমার ছেলে ছোট মানুষ, যদি কারো সঙ্গে কোনো অন্যায় করে থাকে তবে আপনারা তাকে মাফ করে দেবেন। আর কেউ কোনো টাকা-পয়সা পেলে আমাকে জানালে আমি পরিশোধ করে দেব। এই দুই লাইন কথার বেশি আর কিছুই বলতে পারেননি শোকাহত বাবা।
অনেকেই বলছিলেন, বাবার কাঁধে ছেলের লাশের চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন, পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা শোকাহত বাবাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। তবুও চোঁখের জল যেন শেষ হবার নয় এমপি বাবার।
আকরামুল ইসলাম/জেডএ