খেলাধুলা

সিনিয়রদের ওপর নির্ভরতাই বদলে দিয়েছে টিম বাংলাদেশকে

বাংলাদেশ দলে একজন কোচের ভুমিকা কি? তিনি কি করেন? তার দায়িত্ব-কর্তব্যই বা আসলে কি? তার কর্ম পরিধিই বা কতটুকু?

Advertisement

অনেকেই খুঁটিয়ে দেখেন না। বাস্তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে এক ঝাঁক বিদেশি কোচিং স্টাফ কাজ করছেন। ট্রেনার, ফিজিও থেকে শুরু করে ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং- সব বিভাগেই পৃথক স্পেশালিস্ট কোচ আছেন। বোলিংয়ে আবার পেস-স্পিন দুই জন কোচও কাজ করছেন।

এত বড় স্পেশালিস্ট কোচ টিম সঙ্গে থাকলে একজন হেড কোচের কাজ এমনিই কমে যায়। গেছেও। তার আসল কাজ ছিল- কোন সিরিজ কিংবা আসরে প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশন মাথায় রেখে দল সাজানো এবং গেম প্ল্যান ও কৌশল আঁটা। সে কাজে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ব্যর্থ তা বলার উপায় নেই।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, এর বাইরে হেড কোচের আরও দায়িত্ব কর্তব্য থাকে। ছিলও। সেই কাজগুলো হাথুরু কেমন দক্ষতার সাথে পালন করেছেন, সেটাও খুঁটিয়ে দেখা দরকার। সবার আগে তার কাজ ছিল ক্রিকেটারদের জন্য একটা সুস্থ, নির্ভার ড্রেসিং রুম নিশ্চিত করা। তা কি হাথুরু করতে পেরেছেন?

Advertisement

হাথুরুর সময় কি বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম শান্তির নিড় ছিল? তখন কি মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের স্বাধীনভাবে খেলার অধিকার ছিল? তারা কি মাঠে নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন?

গত সাতদিনে প্রমাণ হয়েছে, না ড্রেসিং রুম এখনকার মত আগে শান্তির নিড় ছিল না। ক্রিকেটাররা বিশেষ করে, সিনিয়র ক্রিকেটাররা শতভাগ স্বাধীনতা পাননি। গেম প্ল্যান ও কৌশল নির্ধারণ এবং মাঠে উপস্থিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও ছিল অনেক কম।

তাই তিনজাতি সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক মাশরাফির অকপট স্বীকারোক্তি, ‘আমাদের ড্রেসিংরুম এখন অনেক বেশি নির্ভার। আমরা আগের চেয়ে অনেক স্বাধীনতা পাচ্ছি।’ এরপর শুক্রবার রাতে শ্রীলঙ্কাকে চরমভাবে পর্যদুস্ত করার পর সাকিব আল হাসান প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন, ‘আমরা এখন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি।’

তার মানে আগে পারতেন না। এই যে চাপমুক্ত-নির্ভার ড্রেসিং রুম আর সিনিয়র ক্রিকেটারদের মাঠে উপস্থিত মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দেয়া- এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করেছেন সুজন।

Advertisement

তিনি খুব ভালকরে জানেন, মানেনও- তার দলে অন্তত পাঁচজন ক্রিকেটার আছেন, যারা দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে দারুণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। পরিণত, মেধাবি এবং কখন কী করতে হবে- তাও বেশ ভাল মতই জানেন তারা। এই সব ক্রিকেটারদের অযথা চাপে না রেখে স্বাধীনতা দিয়ে এবং নিজের ইচ্ছেমত করে খেলতে দিলে আরও ভালো সার্ভিস পাওয়া যাবে।

সুজন ঠিক সেই কাজটাই করেছেন। অযথা বেশি ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা না করে ড্রেসিং রুমকে নির্ভার এবং সিনিয়রদের ওপর দায়িত্ব অর্পণই তার এবারের কোচিং ম্যাথডের মূল বিষয়। সেটাই এখন পর্যন্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে ভাল খেলার মূল কারণ।

স্বাধীনভাবে খেলা আর নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পেরে আবার সাকিব ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠে পরপর দুই ম্যাচে জয়ের রূপকার এবং ম্যাচ সেরা। তামিম ইকবাল টানা দুই ম্যাচে ৮০’র বেশি রান (দুই ম্যাচেই ৮৪) করেছেন। টেস্ট অধিনায়কত্ব হারানো মুশফিক ঠিক আগের মতই দ্যুতি ছড়িয়ে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। হাথুরুর কাছে চরম নিগৃহীত নাসির বিপিএলের মত বল হাতে পেয়েই ব্রেক থ্রু উপহার দিচ্ছেন। অ্যাপ্রোচই গেছে বদলে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বিধ্বস্ত দলটি আবার জয়ের ধারায়। তাও যেনতেনভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নয়। একদম বীরের মত। প্রতিপক্ষ বোলিংকে দুমড়ে মুচড়ে আর ব্যাটিংকে গুঁড়িয়ে দিয়ে।

জিম্বাবুয়ে তো ছোট মাছ। বাংলাদেশ মাঝে ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মত রাঘব বোয়ালও শিকার করেছে। বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরাদের কাতারেও নাম লিখিয়েছে; কিন্তু এবার ঘরের মাঠে তিন জাতি ক্রিকেটে প্রথম দুই ম্যাচে দলটি আরও অনেক বেশি উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত আর দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তা কেন? আর কি ব্যাখ্যার আর দরকার আছে?

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম