খেলাধুলা

হাথুরু এখন অতীত, সুজনই জাতীয় দলের কাণ্ডারী

হাথুরু, হাথুরু, হাথুরু!!! যত কথা বাংলাদেশের সাবেক কোচকে নিয়ে। অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হোটে-রেস্তেরাঁ- সর্বত্রই এখন হাথুরু প্রসঙ্গ। বললে এতটুকু বাড়াবাড়ি হবে না যে, শ্রীলঙ্কান চন্দিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। বাংলাদেশের কোচ থাকা অবস্থায়ও তাকে নিয়ে এত কথা হয়নি।

Advertisement

ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি আসলে টাইগারদের সাথে হাথুরুর লড়াই- এমন কথাও বলা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। তাকে নিয়ে যত কথা-বার্তাই হোক না কেন; কিন্তু কঠিন সত্য হলো, হাথুরু এখন অতীত। তিনি আর বাংলাদেশের কোচ নন। এখন শ্রীলঙ্কার কোচ।

পেশাদারিত্বের যুগে একজন কোচ আজ এই দলে, কাল ওই দলে কাজ করবেন- সেটাই স্বাভাবিক। এটা তার নৈতিক অধিকার। নিয়ম-নীতি এবং রীতিও। হ্যাঁ, হাথুরুর চলে যাওয়ার ধরণটা হয়ত ঠিক ছিল না। একটি সিরিজ শেষে বিদেশ থেকে ই-মেইলে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়ে নিজ দেশের বোর্ডের সাথে দেন-দরবার করেছেন।

কারণ যাই থাকুক না কেন, তার চলে যাওয়ার ধরণটাই যত দৃষ্টিকটু। আর আচরণেও অনেকখানি অপেশাদারিত্ব ছিল। দায়িত্ব ছাড়ার পর তার কিছু কথা-বার্তা, বিশেষ করে বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ভক্ত ও সমর্থকদের মনে রীতিমত তার সম্পর্কে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু তারপরও ঘুরে-ফিরে কথা একটাই, হাথুরুসিংহে।

Advertisement

মনে রাখতে হবে হাথুরুসিংহে চলে গেছেন। এখন তিনি শ্রীলঙ্কার কোচ। তাকে নিয়ে বাক্য ব্যয় অর্থহীন। তিনি কি করেছেন, কি করতে পারেননি। এসব আলোচনাও অর্থহীন। এটাই সত্য। সেটাই শেষ কথা। হাথুরু মাঝ নদীতে দলকে ছেড়ে যাবার পর যে দু’জনার হাতে টিম বাংলাদেশের হাল- সেই খালেদ মাহমুদ সুজন আর রিচার্ড হ্যালসলকে নিয়েও ছিল নানা মত।

বলা হয়েছে, জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া এবং গণ মানুষের পুরোপুরি পছন্দের জন নন, তাই খালেদ মাহমুদকে হেড কোচ করেনি বিসিবি। ‘টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের’ তকমা এঁটে দেয়া হয়েছে। এই টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পরিচয়টা আবার আরেক ধুম্রজাল তৈরি করেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আচ্ছা আসল কোচ কে, সুজন না হ্যালসল?’

কারো কারো মনে সুজনের ক্রিকেট মেধা ও কোচিং সামর্থ্য নিয়েও ছিল সংশয়। এমন কথাও শোনা গেছে, আরে সুজন কী হাথুরুরর বিকল্প হতে পারবেন? হাথুরুর ক্রিকেট মেধা-বুদ্ধি অনেক। তার গেম প্ল্যান ও ছক আঁটা এবং কৌশলটাও ছিল অনেক সমৃদ্ধ। সাথে হাথুরুর ব্যক্তিত্ব ছিল প্রবল। ক্রিকেটারদের কঠোর অনুশাসনে রাখতেন।

খালেদ মাহমুদ সুজনের কি অত ক্রিকেট মেধা আছে? তার লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও কৌশল কি হাথুরুর মত সুক্ষ্ম হবে? তিনি কি মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের মত সিনিয়র ও তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন?

Advertisement

যারা এসব কথা-বার্তা বলেছেন, তারা একটি বিষয় আমলে আনেননি। যাকে নিয়ে এত সংশয়-সন্দেহ, সেই খালেদ মাহমুদ সুজন জাতীয় দলে আগে হেড কোচের দায়িত্ব পালন না করলেও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, বিসিএল এবং বিপিএলে প্রায় নিয়মিত কোচিং করিয়ে আসছেন। তার কোচিংয়ে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহরা ক্লাব ক্রিকেট ও বিপিএল খেলেছেন। জাতীয় দলের এমন সদস্য নেই যিনি কোনো না কোনো পর্যায়ে কখনো সুজনের কোচিংয়ে খেলেননি। তাই তাদের সামলানোর মত ব্যক্তিত্ব সুজনের নেই- এমন ভাবা ছিল রীতিমত বোকামি।

এরপর এসেছে ক্রিকেট, মেধা-বুদ্বি, দর্শণ ও কৌশল আঁটা ও ছক কষা নিয়ে কথা। সুজনের ক্রিকেট মেধা কম। তার বোধ-উপলব্ধি, দর্শন এবং লক্ষ্য ও পরিকল্পনা করার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলাও অবান্তর। বলার অপেক্ষা রাখে না, তিনি ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে প্রাইম ব্যাংক আর আবাহনীর মত বড় দলের হয়ে প্রায় এক যুগ কোচিং করাচ্ছেন। ওইসব ক্লাবে নিশ্চয়ই যেন-তেন ক্রিকেটার খেলেন না! ক্রিকেট বোধ ও বুদ্ধি কম থাকলে নিশ্চয়ই ওই দলগুলোকে কোচিং করাতে পারতেন না।

আর তারচেয়ে বড় কথা সীমিত ক্রিকেট বোধ ও বুদ্ধি দিয়ে গত কয়েক বছর বিপিএলে মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, শহিদ আফ্রিদি, সুনিল নারিন, ডোয়াইন ব্রাভো, মোহাম্মদ আমির, এভিন লুইস আর কাইরন পোলার্ডের মত নামী ক্রিকেটারদের কোচিং করাতে পারতেন না। তাহলে অবশ্যই প্রশ্ন উঠতো।

তিনজাতি আসর আর শ্রীলঙ্কার সাথে হোম সিরিজ পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই বোঝা যাবে সুজনের সত্যিকার দৌড় কোন পর্যন্ত যায়। এখন পর্যন্ত ভালই মনে হচ্ছে। প্রথম দুটি ম্যাচে তো জয় এনে দিয়েছেন তিনি। দেখা যাক, ঘরের ছেলে সুজন কতদুর যেতে পারেন!

আইএইচএস/জেআইএম