বাংলাদেশের বেঙ্গল ক্রিয়েশনস ও কলকাতার নাথিং বিয়ন্ড সিনেমার ব্যানারে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে ‘বালিঘর’। ছবিটি নির্মাণ করছেন কলকাতার নির্মাতা অরিন্দম শীল। আজ শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় হোটেল সোনারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত হয় ছবিটির দুই প্রযোজকের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরতা অনুষ্ঠান।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে বেঙ্গল ক্রিয়েশনস-এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক আবুক খায়ের, নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, লুভা নাহিদ চৌধুরী, এন রাশেদ চৌধুরী। নাথিং বিয়ন্ড সিনেমার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। সেখানে তিনি ছবিটির ব্যাপারে অনেক কথা জানালেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন। সঙ্গে ছিলেন লিমন আহমেদ
জাগো নিউজ : বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে সিনেমা করতে যাচ্ছেন। অনুভূতিটা কেমন?অরিন্দম : দেশ ভাগের আগেও এই বাংলার সঙ্গে কলকাতার আত্মার সম্পর্ক ছিলো। দেশ ভাগের পর এখনো আছে। দুই বাংলাকে এক করে কাজ করার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। সেই ভাবনা থেকেই আপনাদের মেয়ে জয়া আহসানকে নিয়ে নিজের প্রথম ছবিটা পরিচালনা করেছিলাম। তবে বড় আয়োজনের বাংলাদেশের সঙ্গে এটাই প্রথম কোনো কাজ। এটা আমার স্বপ্নের নির্মাণ। অবশেষে ইচ্ছেটা পূরণ হওয়াতে ভালো লাগছে। আর এই সুযোগের সৃষ্টির জন্য বেঙ্গল ক্রিয়েশনসের আবুল খায়ের লিটু ভাই ও লুভা নাহিদ দিদির কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
জাগো নিউজ : যৌথ প্রযোজনা নিয়ে এই দেশে সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু গোলমাল হয়েছে। নীতিমালায় সংশোধন এসেছে। সেইদিক থেকে ‘বালিঘর’ সব নিয়ম পেরিয়ে এসেছে কী?অরিন্দম : এই প্রশ্ন আমাকে করে বিব্রত করবেন না প্লিজ। আমি আমার দেশের নিয়মটুকু নিয়ে বলতে পারবো। এখানকার যা সেটা দেখবে বেঙ্গল ক্রিয়েশনস। তবে এখানকার গোলমাল সম্পর্কে আমি অবগত। এখানে যৌথ প্রযোজনার নামে অনেক অনিয়মের অভিযোগ যেমন আছে তেমনি কলকাতাতেও অনেকে বিরক্ত। যৌথ প্রযোজনার নাম করে একদেশের সিনেমা দুই দেশে চালানো হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। এতে দুটি দেশের সিনেমা ও সিনেমার মানুষেরাই কিন্তু ঠকেছে। এটা নিজের সততার বিষয়। তবে আমি বেঙ্গলকে যতটুকু জানি ও চিনি তাতে কখনোই গোলমালের কিছু হবে বলে বিশ্বাস করি না। আমি শুনেছি ছবিটির চিত্রনাট্য এই সপ্তাহেই প্রিভিউ কমিটিতে জমা দেয়া হবে। আপাতত এটি প্রস্তাবনাতে রয়েছে। অনুমতি পেলেই বাকি কাজ এগিয়ে নেয়া হবে।
Advertisement
জাগো নিউজ : ছবিটির গল্প ও শুটিংয়ের বাংলাদেশের গুরুত্ব কতটুকু?অরিন্দম : ছবিটির ৯৫ শতাংশ শুটিং বাংলাদেশেই হবে। এখানে সাত বন্ধুর অনেক দিন পর দেখা হওয়ার গল্প। তাদের দুই বন্ধু মধুময় ও বন্দনা ঢাকার। তাদের ইমোশন, সম্পর্কগুলো উঠে আসবে। তারা একটা সময় বেড়াতে আসবে কক্সবাজারে। এখানে অনেকদিন শুট করতে হবে আমাদের। তারপর ঢাকাতেও কিছু কাজ আছে। আর কলকাতার শুটিং হবে শান্তি নিকেতনে। কারণ এই সাত বন্ধুই ওখানকার শিক্ষার্থি ছিলো। ছবির গল্প ও চরিত্র সবখানেই দুই দেশের গুরুত্ব থাকবে।
জাগো নিউজ : আপনার ছবির নামকরণে বরাবরই মুন্সিয়ানার ছাপ লক্ষ করা যায়। ‘বালিঘর’ নামটির উৎস কী?অরিন্দম : আমি এটি নিয়েছি সুচিত্র ভট্টাচার্যের উপন্যাস ‘ঢেউ আসে ঢেউ যায়’ থেকে। ছবিটাও তারই ছায়া অবলম্বনে। সুচিত্রাদি আমার খুব শ্রদ্ধার মানুষ। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। ইচ্ছে ছিলো তার কোনো একটি সাহিত্য নিয়ে কাজ করবো। সেটি পূরণ হতে চললো। এখানে বন্ধুত্ব, আবেগীয় সম্পর্কগুলো বেশ ক্রিটিক্যালভাবে উঠে আসবে। দেখে মনে হয় অনেক গভীর, কিন্তু মুখোশের আড়ালে বেশ হালকা।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশের জয়া আহসানকে আপনিই কলকাতায় প্রথম নায়িকা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। যৌথৈ প্রযোজনার ছবি হিসেবে এটা আপনার প্রথম ছবি বাংলাদেশের সঙ্গে। এখানে জয়াকে রাখেননি কেন?অরিন্দম : জয়া আহসান বাংলাদেশ তো বটেই বাংলা চলচ্চিত্রের গর্ব বলে মনে করি আমি। সে নিজের নাম ও জাত চিনিয়ে চলেছে। তাকে নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি কাজ করেছি। আগামীতেও করবো। তবে এই ছবিটিতে আমি নতুন কিছু ভাবতে চেয়েছি। একটা জমজমাট কোলাবোরেশন চেয়েছি দুই বাংলা থেকে। তাই তিশা, শুভ ও নওশাবাকে বাছাই করলাম এখান থেকে। ওপারে আছে রাহুল, আবির, পার্ণো ও অনির্বাণ। আবির আমার খুব পছন্দের একজন অভিনেতা। রাহুল অনেক গুণী একজন অভিনেতা। পার্ণোকে তো আপনারা আমার বন্ধু ফারুকীর ‘ডুব’ ছবিতে দেখেছেন কী অসাধারণ সে। অনির্বাণ আমার লাস্ট দুটি ছবিতে দারুণ কাজ করেছে। তাদের উপর আমার অনেক আস্থাশীল।
জাগো নিউজ : আর বাংলাদেশিদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন ভাবনাগুলো কাজ করেছে?অরিন্দম : আরেফিন শুভ’র ঢাকা অ্যাটাক আমি দেখেছি। সে এখানকার সুপারস্টার। ভিন্ন আমেজের কাজ সে করেছে ছবিটিতে। আমার তাকে দেখে মনে হয়েছে অসম্ভব প্রতিভাবান একজন অভিনেতা। কিন্তু তার অভিনয়টা আরও তুলে ধরার জায়গা রয়েছে। আমি সেই চেষ্টা করবো। আর যখন ঠিক করলাম যে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা করবো, তখনই আমি এই ছবির জন্য তিশাকে ভেবে রাখি। সবার আগে আমরা তিশাকেই চুক্তিবদ্ধ করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তিশার ফ্যান। বলতে গেলে আমি পরিচালক হওয়ার আগে থেকেই তিশার অভিনয় দেখেছি। কিছু কিছু শিল্পী আছে যাদের সঙ্গে কাজের ইচ্ছে মনের ভেতর থাকে। তিশা তাদেরই একজন আমার কাছে। আর নওশাবাকে পেয়েছি শুভ’র হাত ধরেই। সে আমাকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটিতে নওশাবার অভিনয় দেখিয়েছিলো। দেখে মনে হলো আমার ‘জয়া’ চরিত্রটি ওর সঙ্গে যায়।
Advertisement
জাগো নিউজ : ছবির সংগীত নিয়ে বলুন....অরিন্দম : আমার ছবিতে মিউজিক বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হিসেবে রাখি। এবারেও সেই চেষ্টা থাকবে। এখানে আপনাদের চিরকুটের সঙ্গে কাজ করবে আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। বিক্রমকে ভারতবর্ষের গর্ব বলবো আমি। পণ্ডিত শংকর ঘোষের সুযোগ্য পুত্র। তার ফিউশনগুলো বিশ্বময় শ্রোতাদের মুগ্ধতা দিচ্ছে। আমার দৃড় বিশ্বাস বিক্রমের সঙ্গে চিরকুটের কোলাবোরশনে অসাধারণ মিউজিক পাবো আমরা। চিরকুটের গান আমি ‘ডুব’ ছবিতে দেখেছি। সুমির গায়কী ও লিরিকের ভক্ত আমি। ‘বালিঘর’ তার আরও দুর্দান্ত গানের অপেক্ষায়। পাশাপাশি এখানে পান্থ কানাইও গান করবেন। আমি ওই মানুষটার গানের খুব বড় ভক্ত। ইউনিক একটা ভোকাল তার।
জাগো নিউজ : দুই বাংলার সিনেমায় যৌথ প্রযোজনা কেমন প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয় আপনার?অরিন্দম : অবশ্যই ভালো। এতে করে বাজার বড় হয়। দেখুন, দুই বাংলাতেই সিনেমার বাজার খুব খারাপ। এটা বিরাট দুশ্চিন্তার ব্যাপার। আমি চাই বিশ্বজুড়ে যতো বাঙ্গালি আছে সবার কাছে সিনেমা পৌঁছে দিতে। আপনারা হয়তো জানেন, বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ বাঙ্গালি রয়েছে সেটা জাতিগত দিক থেকে পঞ্চম। বিশাল একটা বাজার কিন্তু আমরা তৈরি করতে পারি। সে নিয়ে ভাববার প্রয়োজন। বাজার না পেলে সিনেমা বানাবেন কী করে? বাজার জরুরি। দুই বাংলাতেই বেঙ্গলের মতো রুচিশীল ও শিল্পানুরাগী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সিনেমা নিয়ে এগিয়ে আসছে তখন সামনে হয়তো ভালো কিছু হবে।
জাগো নিউজ : ‘বালিঘর’ মুক্তি পাবে কবে?অরিন্দম : ইচ্ছে তো আছে চলতি বছরই মুক্তি দেয়ার। এপার থেকে যৌথ প্রযোজনার অনুমতি পেলেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুটিং শুরু করতে চাই।
জাগো নিউজ : গত ১৯ জানুয়ারি আপনার ‘আসছে আবার শবর’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?অরিন্দম : এটি আমার মুক্তি পাওয়া অষ্টম ছবি। ২০১৩ সাল থেকে সিনেমা পরিচালনা করছি। ই ক’বছরে আটটি সিনেমা রিলিজ দিতে পেরেছি। আপনাদের ভালোবাসায় সবগুলোই মোটামুটি ভালোভাবে নিয়েছে দর্শক। নতুন ছবিটিও ভালো যাচ্ছে।
এলএ/আরআইপি