দেশজুড়ে

হারিয়ে যাচ্ছে ৫০০ বছরের নিদর্শন, সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

ঐতিহ্যে ঘেরা মৌলভীবাজারের ঐতিহাসিক চারণভূমি। শত শত বছরের পরিক্রমায় ইতিহাসের বাকে গড়ে উঠেছিল আজকের ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থাপত্য শিল্প, পুরাকীর্তি ও প্রত্নতত্ত্ব।

Advertisement

কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মৌলভীবাজারের প্রত্নতত্ত্বগুলোর সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে এগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

মৌলভীবাজারের ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহ্যের বাহক এসব পুরাকীর্তি ও নির্দশনের নামফলক কিংবা সংক্ষিপ্ত পরিচয় উধাও হয়ে গেছে সময়ের পরিক্রমায়।

ফলে গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং পর্যটকরা এসব প্রাচীন নিদর্শনের সঠিক ইতিহাস জানতে হিমশিম খাচ্ছেন। পুরাকীর্তিগুলো দিনে দিনে বিলীন হতে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরাকীর্তির গুরুত্ব উপলব্ধি না করে ধ্বংস করা হচ্ছে এবং কখনো কখনো তা চুরি হয়ে যাচ্ছে। এসব ঐতিহাসিক সম্পদের সংরক্ষণ না করে কর্তৃপক্ষ কোথাও কোথাও নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।

Advertisement

মৌলভীবাজার জেলার যেসব পুরাকীর্তি, প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেগুলো হচ্ছে- আসামের ইস্টার্ন গেট নামে পরিচিত কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন, কামরূপ রাজ ভগদত্তের উপ-রাজধানী দিনারপুর ভগ্নাবশেষ (কাগাবলা), শহরের আদালত এলাকার টাউন হল (সাবেক জিন্নাহ হল), পিটাআইয়ের ভূগর্ভস্থ ব্যাংকার। যেখানে ১৯৭১ সালে হানাদানার বাহিনীর টর্চার সেল ও বধ্যভূমি ছিল, শাহবন্দর বধ্যভূমি, উলু আইলের পাল তোলা জাহাজের ভাসমান মান্ডল, সৈয়ারপুরের প্রাচীন মন্দির, গয়ঘরের খোজার খোলা মসজিদ, তৎসংলগ্ন দীঘি, গড়, দুর্গ ও বিবির মাজার, জগৎসী শ্রী শ্রী দোলগোবিন্দ জিউর আখড়া, মনু নদীর তীরে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলের জাহাজঘাট, মনুমুখ পাটবন্দর, রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগে দুই শতাধিক বছরের পুরনো শ্রী চক্রবর্তী বাড়ির মন্দির ও বিগ্রহ, শতাধিক বছরের প্রাচীন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র একই এলাকায় সিংহবাড়ীর শিব মন্দির, কমলা রানীর দীঘি ও রাজা সুবিদ নারায়ণের পরিবারবর্গের সমাধিস্থল, তারাপাশা শতাব্দী প্রাচীন বিষ্ণুপদ ধাম, মনসুরনগর দেওয়ান বাড়ির দীঘি, চৌধুরীবাজারের প্রাচীন মন্দির, টেংরা দেওয়ান বাড়ির দীঘি, পাঁচগাঁও বাংলা সংবাদপত্রের আদিপুরুষ গৌর শংকর ভট্টাচার্যের বাড়ি, ঐতিহাসিক কালো ঝম ঝম ও জাহান কোষা কামানের নির্মাতা জনার্দন কর্মকারের বাড়ি, রাজা সুবিদ নারায়ণের রাজবাড়ি, ১৯৭১ সালে শহীদদের গণকবর, পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে কোদালী দীঘি।

এছাড়া ঐতিহ্য হারানোর পথে রয়েছে- কুলাউড়া উপজেলার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের তীর্থস্থান রঙ্গিরকুল আশ্রম (বর্তমান ইসকন মন্দির), ভাটেরা টিলার প্রাচীন তাম্রফলক, নন্দনগড়ের সতীদাহ মন্দির, ইরানের শাহানশাহ রেজা শাহ পাহলভীর আগমন উপলক্ষে লংলা রেলস্টেশনে নির্মিত সুরম্য তোরণ, বড়লেখার শাহবাজপুরে মুঘল আমলের সালেগড় দুর্গ, মাধবকুণ্ড ও তৎসংলগ্ন শিব মন্দির, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫০০ বছরের পুরনো শ্রী শ্রী নির্মাই শিববাড়ী, কালপুরের প্রাচীন তাম্রফলক, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর লেক, সমশেরনগর ব্রিটিশ নির্মিত বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন বধ্যভূমি, বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলে নির্মিত বিভিন্ন পুরাকীর্তি।

এসব পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক স্থান ধীরে ধীরে সংস্কারের অভাবে নিশ্চিহ্ন হতে চলছে। এগুলো সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেই কারো।

সরকারি-বেসরকারি কোনো মহলই এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়। এসব ঐতিহাসিক স্থান ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা অতীত ঐতিহ্যের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এতে সুরক্ষিত হবে মৌলভীবাজারের ঐতিহাসিক স্থাপনা।

Advertisement

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যেসব ঐতিহাসিক স্থাপনা সরকারি সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। তবে যেগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন সে বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই।

এছাড়া এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্য শিল্প, পুরকীর্তি ও প্রত্নতত্ত্বের সুষ্ঠু সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

এএম/আইআই