দেশজুড়ে

এখনও থমথমে নারায়ণগঞ্জ

হকার ইস্যু নিয়ে মেয়র আইভী ও এমপি শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের পর কয়েক দিন কেটে গেলেও কাটেনি থমথমে ভাব। বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নারায়ণগঞ্জে আইভী-শামীমের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব পুরনো। তবে সাধারণত বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য আর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ওই দ্বন্দ্ব। তবে সেসবের সীমা ছাড়িয়ে বিরোধ এবার সংঘর্ষে রুপ নেয়ার পর আঞ্চলিক ওই রাজনীতির ঢেউ এসে লেগেছে জাতীয় রাজনীতিতেও। দু’পক্ষের রাজনীতিতে উত্তপ্ত হয়ে আছে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ।

Advertisement

গেল সপ্তাহের মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পর আইভী ও শামীম দু’জনকেই ঢাকায় তলব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এরপর হঠাৎ করে আইভী অসুস্থ হয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হলে ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘুরতে শুরু করে।

ঘটনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় বা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সংঘর্ষের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটিই এখন দেখার অপেক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

সর্বশেষ এ সংঘর্ষ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। প্রভাবশালী এ দু’নেতার পূর্বপুরুষের আদর্শের দ্বন্দ্বের চেয়েও এ বিরোধ আরও বড় বলে মনে করা হচ্ছে। বাগবিতণ্ডা আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দু’জনই নিয়মিত হচ্ছেন সংবাদের শিরোনাম।

Advertisement

কারও কারও মতে ‘শত্রু-শত্রু’ খেলায় মেতেছিলেন তারা দু’জন। কেউ যেন কাউকে সহ্য করতে পারছিলেন না। টিভি টক শো থেকে জনসমাবেশ, কোথাও ক্ষান্ত নেই তারা। এরমধ্যে হকার ইস্যুতে হঠাৎ সংঘর্ষ রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত করে তোলে। ভিডিও ফুটেজে অস্ত্র, আইভীর আহত হওয়ার মতো বিষয়গুলো সারা দেশে সমালোচিত করেছে দু’জনকেই।

শহরের ফুটপাত থেকে হকারদের পুলিশের সহযোগিতায় দফায় দফায় উচ্ছেদ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। শেষ গত ২৫ ডিসেম্বর হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর হকাররা আন্দোলন শুরু করেন। নগর ভবনের সামনে গিয়ে আন্দোলনও করেন তারা। একপর্যায়ে হকাররা যান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের কাছে। পরে হকাররা সড়ক অবরোধ ও অনশনও করেছেন।

রপর শহরে জনতার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী শামীম ওসমানকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলেন। এমনকি তিনি বলেন হকারদের নিয়ে শামীম ওসমানের এতো মায়া কান্না কিসের। তার ছেলের বিয়েতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেন তাহলে তিনি হকারদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে তো পারেন।

আইভীর বক্তব্যের জবাবে শামীম ওসমান পাল্টা অভিযোগ করেন। এরপর হকাররা শহরের চাষাঢ়ায় প্রতিবাদ সভার আহ্বান করেন। সেখানে শামীম ওসমান উপস্থিত হয়ে হকারদের বসানোর ঘোষণা দেন। আর হকারদের বসার জন্য এবং তাদের পাশে থাকার জন্য যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগসহ তার নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেন। আর হকাররা বসার পর পুলিশসহ কেউ যদি বাধা দিতে আসে তাদের প্রতিহত করার জন্য নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশ দেন শামীম ওসমান। আর শামীম ওসমানের এমন ঘোষণার একদিন পর মেয়র আইভী ফুটপাতে হকারদের উচ্ছেদ করতে মাঠে নামলে শামীম ও আইভী সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আর এতে করে মেয়র আইভী ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। আর সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজন পিস্তল বের করে গুলি ছোড়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র আইভী ও শামীম ওসমান উভয়কে দায়ী করেন।

Advertisement

মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ওই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। আর পুলিশ বলছে, দু’পক্ষই সরকারি দলের জনপ্রতিনিধি। তাদের বিষয় কিছু করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হুকুম ছাড়া কিছু করা যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান, শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে বিরোধটা ছিল দূর থেকে। এবার হকার ইস্যু নিয়ে বিরোধটি প্রকাশ্যে রূপ নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে যায়। তাদের এ সংঘর্ষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। কেন সামান্য হকার ইস্যু নিয়ে তাদের লোকজনদের মাঠে নামিয়ে এমন পরিস্থিতি জন্ম দিলো। তাই তাদের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভাবেদ্রুত সমাধান চায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

মো: শাহাদাত হোসেন/এনএফ/আইআই