কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা অরিন্দম শীল। তিনি এবার যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করতে যাচ্ছেন ‘বালিঘর’ নামের চলচ্চিত্র। এটি কলকাতার হয়ে প্রযোজনা করছে নাথিং বিয়ণ্ড সিনেমা ও বাংলাদেশ থেকে প্রযোজনা করবে বেঙ্গল ক্রিয়েশনস।
Advertisement
আজ শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো দুই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। সেখানে ঘোষণা করা হয় ছবির নাম। কলকাতার প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘ঢেউ আসে ঢেউ যায়’ উপন্যাস ছায়া অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত হচ্ছে বলে জানান অরিন্দম। পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ক্রিয়েশনসের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, নন্দিত নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, জনপ্রিয় গানের মানুষ পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ, অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, নওশাবা আহমেদ ও অভিনেতা আরেফিন শুভসহ আরও অনেকেই।
নিজের বক্তব্য রাখগে গিয়ে নির্মাতা অরিন্দম শীল তার পরিচালিত নয় নম্বর এই ছবিটির কলাকুশলীদের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি জানান ছবিটিতে বন্দনা চরিত্রে বাংলাদেশের নুসরাত ইমরোজ তিশা, মধুময় চরিত্রে আরেফিন শুভ ও জয়া চরিত্রে অভিনয় করবেন নওশাবা আহমেদ। কলকাতা থেকে দেখা যাবে আবির চট্টোপাধ্যায়, রাহুল ব্যানার্জি, পার্ণো মিত্র, অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। তারকাবহুল এই ছবির সংগীত পরিচালনায় বাংলাদেশ থাকবে জনপ্রিয় গানের দল চিরকুট ও কলকাতার পক্ষে পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। গান গাইবেন পান্থ কানাই।
Advertisement
ছবির গল্পে দেখা যাবে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়া সাত বন্ধুর স্মৃতিচারণ, আবেগ, সম্পর্ক, মুখোশ ও মুখোশের আড়ালে নানা চিত্রায়ণ। এর ক্যামেরা চালাবেন অরিন্দমের প্রিয় চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার। ছবিটির ৯৫ ভাগ শুটিং হবে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও ঢাকাতে। পাশাপাশি কলকাতার শান্তি নিকেতনেও চিত্রায়িত হবে বেশ কিছু দৃশ্য।
নির্মাতার তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি কোনোদিন সিনেমা নির্মাণে আসবো সেটা ভাবিওনি। ২০১৩ সালে ‘আবর্ত’ দিয়ে প্রথম পরিচালনায় আসি। এখন পর্যন্ত আটটি ছবি আমি নির্মাণ করেছি। সর্বশেষ গতকাল ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে আমার আট নম্বর চলচ্চিত্র ‘আবারও শবর’। এবার নয় নম্বর ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছি। এই ছবিটি আমার কাছে বিশেষ কিছু কারণে বিশেষ কাজ হতে যাচ্ছে।’
বিশেষ হবার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি দিয়ে প্রথমবারের মতো আমি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা ভারতবর্ষেই শুদ্ধ ও রুচিশীল সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তারা এখানে উচ্চাঙ্গ সংগীতের মতো মার্গীয় সংগীতে অগুনতি শ্রোতা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দর শিল্পচর্চার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের সিনেমা নিয়েও বেঙ্গলের চেয়ারম্যান লিটু ভাই (আবুল খায়ের লিটু) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুভা দিদি (লুভা নাহিদ চৌধুরী) অনেকদিন ধরে কাজ করে আসছেন। তারা যৌথ প্রযোজনার মধ্য দিয়ে দুই বাংলাকে এক ফ্রেমে আনারও চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টায় আমার উপর তারা আস্থা রেখেছেন এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আশা করছি বেঙ্গল ক্রিয়েশনস এই দেশ তথা দুই বাংলার সিনেমায় অনন্য এক নাম হয়ে উঠবে। পাশাপাশি তিশা ও শুভ’র অভিনয় খুব ভালো লাগে আমার। নওশাবাও দারুণ একজন অভিনেত্রী। তাদের নিয়ে কাজ করতে যাওয়াটাও আমাার কাছে বিশেষ।
একইসঙ্গে ভারতবর্ষের গর্ব পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ ও বাংলাদেশের অসম্ভব জনপ্রিয় চিরকুটের গানের কোলাবরেশনের মাধ্যমে দারুণ কিছু সুর ও গান দুই বাংলার দর্শক উপহার পাবেন ‘বালিঘর’ থেকে। এটাও আমাকে উচ্ছ্বসিত করছে। সবমিলিয়ে আমি আশা করছি ভালো একটি অভিজ্ঞতাই আমি সঞ্চয় করতে চলেছি।’
Advertisement
‘বালিঘর’ ছবির বাংলাদেশি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ক্রিয়েশনস’র লুভা নাহিদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘দেশে সিনেমার রুচিশীলদের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে, ভালো ছবির দর্শক বাড়াতে ২০১২ সাল থেকেই বেঙ্গল সিনেমা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলো। সেই অভিজ্ঞতা খুব একটা আশা ব্যঞ্জক ছিলো না। তবে বেঙ্গল ক্রিয়েশনস নিয়ে যাত্রা করে এরইমধ্যে আমরা তিনটি ছবি নির্মাণ করেছি। যার একটি ‘মেঘমল্লার’ অন্যটি ‘অনিল বাগচির একদিন’। মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত দুটি ছবিই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। আর বর্তমানে মুক্তির অপেক্ষায় আছে দেশভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটি। আশা করছি এটিও প্রশংসিত হবে। সেই অনুপ্রেরণায় এবার কলকাতার নন্দিত নির্মাতা অরিন্দম শীলকে নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি আমরা। এখানে দুই বাংলার বরেণ্য সব অভিনয়শিল্পীরা কাজ করবেন। চমৎকার একটি গল্প থাকছে। আশা করছি এই যাত্রা দারুণ কিছু বয়ে আনবে দুই বাংলার সিনেমাতে।’
তিনি জানালেন, চলতি সপ্তাহেই ‘বালিঘর’ সিনেমাটির চিত্রনাট্য যৌথ প্রযোজনার অনুমতির জন্য যৌথ প্রযোজনার নতুন প্রিভিউ কমিটিতে জমা পড়বে। সেখান থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলেই আসছে ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে ছবির শুটিং।
এই ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে বেশ উচ্ছ্বসিত তিশা, শুভ ও নওশাবা। তিনজনই অরিন্দম শীলের ছবিতে কাজ করতে পারাটাকে বিশেষ প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন। প্রত্যাশা করছেন কলকাতার গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতায় যুক্ত হবে নতুন তৃপ্তি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে নির্মিত কলকাতার ‘আর্বত’ দিয়ে টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন জয়া আহসান। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন অরিন্দম শীল।
এলএ/আইআই