দেশজুড়ে

আগুন পোহাতে গিয়ে যেভাবে মারা যাচ্ছে মানুষ

তীব্র শীতে উষ্ণতার জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে বাংলাদেশে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। চলতি মাসেই কেবলমাত্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ২১ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী মারা গেছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন আরও প্রায় শতাধীক রোগী।

Advertisement

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গত মাসে যে পরিমাণে রোগী ভর্তি হয়েছেন এ মাসে সেই সংখ্যা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে বিশেষ করে বয়স্ক নারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা সম্ভব নয় এমন বহু রোগী সারা বাংলাদেশের নানা অঞ্চল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এসেছেন। এখানে জায়গার অভাবে মেঝেতেও দেখা গেছে অগ্নিদগ্ধ অনেক রোগীকে।

মাকে নিয়ে আঠারো দিন হলো হাসপাতালে আছেন ডেমরার আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘মা ভোর ৪টার দিকে উঠে চুলায় অজুর জন্য পানি গরম দিয়ে পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন। হঠাৎ শাড়ির আঁচলে আগুন লেগে গেলে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমরা উঠি। ততক্ষণে তার পা থেকে পিঠ পর্যন্ত পুড়ে গেছে।

কাছাকাছি বিছানাতে শুয়ে ছিল ছয় বছরের কেয়া মনি। পরীক্ষায় প্রথম হয়ে মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করেছে। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে গিয়ে পুড়েছে পুরো শরীর।

Advertisement

এমন ভয়ানক কাহিনী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আরও শোনা যায়।

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক গোবিন্দ বিশ্বাস জানান গত মাসে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি অগ্নিদগ্ধ রোগী বার্ন ইউনিটের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু এ মাসে এখনই সে সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. নুর আলম সিদ্দিক জানান, শীতকালে এমনিতেই আগুনে পোড়া এমন রোগী বেশি আসে। কিন্তু এবার আরো বেশি মনে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা যেমন রংপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। আর তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। যেসব রোগী ভর্তি আছে তার ৬৫ ভাগই নারী।

শীতকালে অগ্নিদগ্ধ হলে সেটি অন্য সময়ের থেকে মারাত্মক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের উপদেষ্টা ড. সামন্ত লাল সেন বলেন, উলের তৈরি সোয়েটার, লেপ, কাঁথা বা কম্বলের মত ভারি কাপড়ে আগুন অনেক দ্রুত ছড়ায় এবং তীব্রতা বেশি থাকে। তাই পুড়ে যাওয়ার মাত্রাও অনেক বেশি হয়। আর যে ধরনের ঘরে গ্রামের মানুষ বসবাস করেন সেটিও একটি কারণ। খড়কুটোর ঘরে রাতে আগুন পোহানো গ্রামে শীতকালে অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম কারণ।

Advertisement

সূত্র : বিবিসি

এফএ/এমএস