অর্থনীতি

জনসমুদ্রে হারিয়ে যাবার ভয়

অবশেষে ঢাকা বাণিজ্য মেলা যেন রূপ নিয়েছে ঢাকাবাসীর মিলন মেলায়। মেলামুখী মানুষের জনস্রোত রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে। শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ এতোটাই জনসমুদ্রে পরিণত হয় যে একে-অপরকে হারিয়ে ফেলার ভয় দেখা দিয়েছে। কয়েক বন্ধু একসঙ্গে মেলায় আসলে কিংবা স্বপরিবারে আসলে যদি কোনোভাবে একে অপরের হাত ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন তো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। অনেককেই মেলার প্রচার কেন্দ্রে গিয়ে হারিয়ে ফেলা মানুষটির নাম ঘোষণা করতে দেখা গেছে। 

Advertisement

মেলার প্রচার কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে শুক্রবার বিকেলে ২০ থেকে ২৫টি এমন হারিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে হয়েছে। তাই মেলায় আসা মানুষগুলোকে শক্তভাবে একে-অপরের হাত ধরে থাকতে দেখা গেছে। বিকেল ৫টার দিকে মিরপুর-১ থেকে আসা সাইদুল নামের এক মধ্যবয়সী লোক ৮ বছর বয়সী ভাতিজা সাগরকে হারিয়ে ফেলে ঘোষণা করার জন্য প্রচার কেন্দ্রে এসেছেন। সাইদুল বলেন, ‘স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাতিজাসহ ৫ জন মেলায় এসেছি। সবাই হাত ধরাধরি করে মেলার প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করছিলেন। কিন্তু একপর্যায়ে ভাতিজা সাগরের হাত ছুটে গেলে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। সাগরের কাছে মোবাইল ফোনও নেই। তাই খোঁজ পেতে প্রচার কেন্দ্রে এসেছি।’ 

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার তৃতীয় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। মেলার ১৯তম দিন আজ। মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারণে এবার মেলায় কাঙ্খিতহারে লোকজন আসছিল না। কিন্তু আজ পুরো উল্টো চিত্র। মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, শেষের দিনগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায় বহুগুণ। এবারও তাই হয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা এসেছে। যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, পুরান ঢাকার বকশিবাজার, নাজিরাবাজার, ধানমন্ডি, বাসাবো, খিলগাঁও, উত্তরা, বাড্ডা, হাজারীবাগ প্রভৃতি জায়গা থেকেও লোকজন এসেছেন মেলায়। রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচের লাখো মানুষের গন্তব্য এ মেলা প্রাঙ্গণ। 

উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি ভিড় করেছেন হাজারো গৃহকর্তা আর গৃহিণী। সঙ্গে ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছেন অনেকে। নিম্নবিত্ত থেকে বিত্তশালী সব শ্রেণির মানুষের ভিড় ছিল বাণিজ্য মেলায়। দর্শনার্থীদের অভিযোগ, মেলামুখী যানবাহন অপর্যাপ্ত, সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। অনেক মানুষ গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই মেলায় এসেছেন। 

Advertisement

এদিকে মেলায় বিক্রয় কর্মীরা ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেশি ভিড় ছিল গৃহস্থালি পণ্য এবং খাবার দোকানে। তারুণ্যের ভিড় দেখা গেছে মোবাইল ফোন, ব্লেজার ও কটির স্টলগুলোতে। ভিড় তুলনামুলক কম ছিল হোম অ্যাপ্লায়েন্স, যেমন টিভি, ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এসি বা ফার্নিচারের স্টলে। বরাবরের মতো তরুণীর ভিড় ছিল গহনার দোকানগুলোতে। গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী বিক্রয়, বিশেষত প্লাস্টিক পণ্যের স্টল আরএফএল, বেস্টবাই, ইটালিয়ানো, বেঙ্গল হ্যাপিমার্ট, শরীফ মেলামাইনের স্টলে ছিল ব্যাপক ভিড়। আরএফএলের বিক্রয়কর্মী সুমন জানালেন, একদিনের বিক্রির রেকর্ড ভেঙেছে। গত শুক্রবার একদিনে যা বিক্রি করেছিলাম, আজ বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ। 

কথা হলো মধ্য বাসাবোর গৃহিণী আসমা বেগমের সঙ্গে। মেলায় এসেছেন মাদারীপুর থেকে বেড়াতে আসা ননদ রাফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। বললেন, মেলায় যা বিক্রি হয়, তা বাসার আশপাশেই পাওয়া যায়। ননদের শখ ছিল বাণিজ্য মেলায় আসার। তাই এলাম, সঙ্গে কিছু গৃহস্থালি পণ্য কিনে নিলাম। উত্তরা থেকে আসা কলেজপড়ুয়া বন্ধুর দল রোকন, সাফি, শরীফ, আহাদসহ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হলো বাণিজ্য মেলায়। আহাদ জানালো, তারা স্রেফ ঘুরতে এসেছে। তবে নড়াইল থেকে আসা শরীফ হাজার টাকায় ব্লেজার কিনেছেন। মেলার ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও তাদের বড় অংশই ভিড় করেছেন খাবার স্টলগুলোতে। বিশেষত ফাস্টফুড ও আইসক্রিমের স্টলে। শীতের হালকা ঠান্ডার মধ্যেও তরুণ ও শিশুর ভিড় লেগে ছিল ইগলু বা ব্লুপের স্টলে।

এমইউএইচ/ওআর/পিআর

Advertisement