এমন সময় খেলা, স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে যে একটু ঘুরতে বেরোবেন, একটা ভাল রেস্তোরাঁ কিংবা ফাইভ স্টার হোটেলে লাঞ্চ করবেন- সে সুযোগ নেই। খেলা শেষে রাতে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ডিনারে যাবার সময় হয়ত দেখা মিলবে; কিন্তু ততক্ষণে মুডটা কি ভাল থাকবে?
Advertisement
মুড খুব ভাল থাকতো, যদি সেঞ্চুরিটা হয়ে যেত। তাহলে তামিম ইমবাল তো খুশি হতেনই। তার চেয়ে অনেক বেশি খুশি হতেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। আজ যে তার জন্মদিন!
যেহেতু শুক্রবার স্ত্রীকে জন্মদিনের উপহার দেয়ার সুযোগ ছিল না। তাই তামিম যেন পণ করেই নেমেছিলেন, স্ত্রী আয়শাকে ‘ওয়ানডে সেঞ্চুরি’ উপহার দেবেন। আজকের দিনে সেঞ্চুরিটাই হতে পারতো স্ত্রীর জন্য তামিমের সেরা ‘বার্থ-ডে গিফট।’
নিশ্চয়ই আয়েশাও সে গিফট পেয়ে সবচেয়ে খুশি হতেন; কিন্তু তা হয়নি। স্ত্রীর জন্মদিনে শতরান করা হলো না তামিম ইকবালের। তা হলে হয়ত, তামিম পরিবারে আজকের রাতে আনন্দের ফলগুধারা বয়ে যেত। স্ত্রী আয়েশার জন্মদিনে উৎসব-আনন্দর মাত্রা হতো দ্বিগুণ।
Advertisement
তারপরও আজকের দিনে খুশির উপলক্ষ আছে। তামিমের সেঞ্চুুরি না হলেও দিন শেষে জিততে যাচ্ছে টিম বাংলাদেশই। তামিমের ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ ৮৪ রানের ঝলমলে ইনিংস।
‘আমি এসেছি’- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের আগমনধ্বনী দিয়েছিলেন সেই ২০০৭ সালে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে। সে সময়ের ভারতের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার জহির খানকে দু’ পা বেরিয়ে উইকেটের সামনে হাওয়ায় উড়িয়ে ছক্কা হাঁকিয়েই তামিম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বড় বড় বোলারকে শাসন করতেই এসেছেন তিনি।
বাঘা বাঘা বোলারকে অবলীলায় এদিক ওদিক দিয়ে উড়িয়ে মারা আর লম্বা ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ আছে তার। যত সময় গড়িয়েছে, তামিমের সামর্থের প্রমাণ মিলেছে ততই।
সময়ের প্রবাহমানতায় তামিম বনে গেছেন বাংলাদেশের এক নম্বর ওপেনার। শুধু ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাই নয়, ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে টেস্ট আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশের টপ স্কোরারও বনে গেছেন তিনি।
Advertisement
শুরুতে তামিম মানেই ছিল মার-মার কাট-কাট আর ধুন্ধুমার উইলোবাজি। লম্বা সময় উইকেটে থেকে ইনিংসকে দীর্ঘ করার চেয়ে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছোটাতেই বেশী মনোযোগি মনে হতো তাকে। দায়িত্ব নিয়ে বলের মেধা-গুণ বিচার করে খেলার চেয়ে চটকদার মার বা স্ট্রোক প্লে করে দর্শক বিনোদনের খোরাক জোগাতেই যেন বেশি চেষ্টা করতেন।
সময়ের হাত ধরে সেই তামিম এখন অনেক বদলে গেছেন। নজর কাড়া ব্যাটিং করা বাদ দিয়ে নিজেকে তিলে তিলে এক দায়িত্ব সচেতন ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। তাই এখনকার তামিম নির্ভরতার প্রতীক। দায়িত্ব সচেতন এক ব্যাটসম্যানের প্রতিচ্ছবি।
তার ব্যাট কতটা ধারাবাহিক, একটি ছোট্র পরিসংখ্যানেই তা পরিষ্কার হবে। ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত শেষ ১৫ ইনিংসে তামিম ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলেছেন। যার মধ্যে আছে দুটি বিগ হান্ড্রেড। আর সাতটি ফিফটি। বাকি ছয় ইনিংসে দুবার কেবল দুই অংকে পা রাখা সম্ভব হয়নি। এই সময়ে লাল সবুজ জার্সি গায়ে তার ওয়ানডে ইনিংসগুলো এমন ; ১৬+৫৯+১২৭+৪+৬৪*+২৩+৪৭+৬৫+১২৮+৯৫+০+৭০+২৩+ ৮৪*+৮৪।
এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় তামিম এখন সত্যিই টিম বাংলাদেশের বড় সম্পদ। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ। ৫০ ওভার শেষে মাশরাফির দল কতদুর যাবে, কোথায় গিয়ে থামবে- তা অনেকটাই নির্ভর করে তামিমের ওপর। তামিম ভাল খেললে দলের ব্যাটিং ভাল হয়। স্কোরলাইন মোটা তাজা হয়।
কোন চ্যালেঞ্জিং টার্গেটের পিছু ধাওয়া করে তামিম যদি একদিকে সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং করে রান গতি সচল রাখলে বাংলাদেশ অনায়োসে পৌছে যায় জয়ের লক্ষ্যে। বেশী দুর পিছন ফিরে তাকাতে হবেনা , ১৫ জানুয়ারি শেরে বাংলায় জিম্বাবুয়ের ১৭০ রানের পিছু ধেয়ে তামিম ৯৩ বলে ৮৪ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দেয়ায় মাশরাফির দল খেলার ১২৯ বল আগে পৌছে গিয়েছে জয়ের লক্ষ্যে।
আর আজ শ্রীলঙ্কার সাথে তামিম মাত্র ১৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি, তাকে কি? তার চওড়া ব্যাটই দলকে শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে। সাথে সাকিব আর মুশফিক আরও একজোড়া অর্ধশতক হাকালে বাংলাদেশের রান ৩২০। শেষ পর্যন্ত তামিমের ১০২ বলে ৮৪ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
যেভাবে খেলছিলেন তাতে সেঞ্চুরি হয়ে যেত অনায়াসে। কিন্তু লঙ্কান অফস্পিনার আকিলা ধনাঞ্জয়ার বলে সামনের পায়ের ওপর ভর করে খেলতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। কোন শটস খেলার চেস্টা ছিল না। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতেই চেয়েছিলেন; কিন্তু খুব ভাল জায়গায় পিচ পড়া ডেলিভারি অফস্পিন করে বেরিয়ে যাবার সময় ব্যাট চুমু দিয়ে চলে গেল কীপার ডিকভেলার গ্লাভসে। তখনো ইনিংসের বাকি ছিল ১২৫ বল। একটা বিগ হান্ড্রেড উপহারের সুবর্ণ সুযোগ হলো হাতছাড়া।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর