দেশজুড়ে

ওই সময় অনেক কষ্ট পেয়েছি, কাউকে বলতে পারিনি

এটি বিজয়ের গল্প। যে গল্পের কথাগুলো অনেক ধর্ষিতা নারীর কোনো একজনকে সাহসী হয়ে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দেয়, ফিরিয়ে দেয় সম্মান। প্রতিষ্ঠিত করে দেয় সমাজে এমনকি রাষ্ট্রে।

Advertisement

হয়তো এবার তার মতোই আরও অনেক নির্যাতিতার গল্প বলার সাহস পাবেন পূর্ণিমা রানী শীল। তারানা হালিমের মতো নেতাদের কথাও থাকবে সেসব সাহসী গল্পে।

সিরাজগঞ্জে ২০০১ সালে গণ-ধর্ষণের শিকার হওয়া পূর্ণিমা রানী শীলকে নিজের ‘পার্সোনাল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

পূর্ণিমা রানী শীলের চাকরির বিষয়ে ফেসবুকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম লিখেছেন, ‘মনে পড়ে সেই পূর্ণিমাকে? ২০০১ এর ১ অক্টোবর নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামাতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি।’

Advertisement

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৪ বছরের কিশোরী পূর্ণিমার ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। এ ঘটনায় ১৭ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন পূর্ণিমা।

ঘটনার ১০ বছর পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ২০১১ সালের মে মাসে ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং জরিমানার অর্থ পূর্ণিমাকে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

দুঃসহ সেই ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়। জীবনেও এসেছে নানা উত্থান-পতন। এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেষ্টা করেছেন পূর্ণিমা।

ইতোমধ্যে লেখাপড়া শেষ করেছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও নিয়েছেন। বাচ্চাদের গান শেখানোর কাজ করেছেন। তবু হয়রানি তার পিছু ছাড়েনি।

Advertisement

এ নিয়ে পূর্ণিমা রানী শীল বলেন, হঠাৎ ২০১৬ সালের কোনো একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখি আমার নাম, টেলিফোন নম্বর আর ছবি ব্যবহার করে খোলা হয়েছে ভুয়া অ্যাকাউন্ট। সেখান থেকে আপত্তিকর সব ছবি পোস্ট করা হয়েছে। এমনকি আমার সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছে বন্ধু হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে ওই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে।

ফলে পরিচিতজনদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। ওই সময় অনেক কষ্ট পেয়েছি। কাউকে বলার সুযোগ হয়নি। অনেক দুঃখ-কষ্ট থাকলেও থেমে ছিল না পথচলা। মাঝে মাঝে ঝড় আসতো তবুও হাল ছাড়িনি।

অবশেষে গতকাল বুধবার তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেয়ায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।

সেই সঙ্গে পূর্ণিমা রানী শীল উল্লাপাড়াবাসীর সেবা করার স্বপ্ন দেখছেন। সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। ঈদ ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনে এখন উল্লাপাড়া ছেয়ে গেছে।

উল্লাপাড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাপ্তাহিক জনতার সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম সবুজ বলেন, অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতেন পূর্ণিমা ও তার পরিবার। সরকারের এ মহতী উদ্যোগ পূর্ণিমাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখালো।

এ নিয়ে পূর্ণিমা রানী শীলের বড় ভাই অর্জুন শীল বলেন, ছোট থেকেই অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে পূর্ণিমা। শত লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ্য করে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। আজ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এর চেয়ে বড় আনন্দের কিছু নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ণিমা রানী শীল বলেন, আমার সরকারি চাকরি হয়েছে। এখন মাথার বোঝা হালকা হয়েছে। চাকরির ব্যবস্থা করেছেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দিদি। জয়দেব নন্দী দাদার সহযোগিতায় চাকরিটি পেলাম। তাদের কাছে আমি ও আমার পরিবার সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। সেই ২০০১ সালের ভয়ঙ্কর ঘটনার পর আমাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি।

পূর্ণিমা আরও বলেন, আমার মা চেয়েছিলেন যেন একটি সরকারি চাকরি পাই। সেই মায়ের স্বপ্ন পূরণ হলো। আজ এ চাকরির কথা শুনে মা অনেক খুশি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তারানা হালিম দিদি এবং জয়দেব দাদাসহ দেশবাসীর কাছে আমি আশীর্বাদ চাই। যেন আমাকে দেয়া দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারি।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/আইআই