হাজারো শিশুর জীবনকে নীরবে আলোকিত করে যাচ্ছেন সূর্য দাস তপন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে চান আমৃত্যু। একসময় কবিতা লিখতেন সূর্য দাস। ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। সেই টানেই অবসরে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে সবুজের টানে ছুটে যেতেন। তাতেই নজরে আসে শিক্ষা ও সুবিধাবঞ্চিত চা বাগানের লক্ষাধিক শিশুর প্রতি। বেকার তপনের মনে দাগ কাটে শিশুদের নিশ্চিত অন্ধকার ভবিষ্যৎ। তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন এই শিশুদের জন্য কিছু করবেন।
Advertisement
সময় তখন ২০০১ সাল। সদ্য বাবা হারিয়েছেন তপন। সংসারের গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। পৈতৃক ফটো স্টুডিওর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে হয়ে যান ফটোগ্রাফার। বাবার রেখে যাওয়া ক্যামেরাই হয়ে ওঠে তার জীবন চলার সম্বল। নিজের সঞ্চয় কিছু নেই জেনেও সংসারের নিত্যদিনের খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে 'আদর্শলিপি' কেনেন। সেই বই প্রতি শুক্রবার স্টুডিও বন্ধ রেখে চা বাগানের শিশুদের হাতে তুলে দিতেন সূর্যদাস তপন। পরে ভাবলেন শিশুদের জন্য একটু রঙিন চকচকে বই দরকার কারণ রঙিন বই শিশুরা অনেক পছন্দ করে। কয়েক মাস পর নিজেই ‘বর্ণকুড়ি’ নাম দিয়ে রঙিন আদর্শলিপি ছাপাতে শুরু করলেন ঢাকা থেকে। প্রতিটি বইয়ের খরচ পড়ল প্রায় ১৮ টাকা।
সেই ২০০১ সাল থেকে ‘বর্ণকুড়ি’ বিতরণ করছেন মৌলভীবাজার জেলার দেওছড়া, মিরতিঙ্গা, ফুলছড়া, ভাড়াউড়া, মাইজদিহি, প্রেমনগর, গিয়াসনগর, ভুরভুরিয়ার ৮ চা-বাগানে।
এছাড়া রাস্তাঘাট, বস্তি যেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশু দেখেছেন তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘বর্ণকুড়ি’। হাওড় অঞ্চলেও বিতরণ করেছেন অনেক বই। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ‘বর্ণকুড়ি’ বই শিশুর হাতে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। শুধু নিজ জেলায় নয় যেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দেখেন সেখানেই বই বিলি করেন।
Advertisement
তপন আফসোস করে বলেন, এ পর্যন্ত সরকার বা বিত্তশালী কেউই পাশে এসে দাঁড়াল না। নিজে কারো কাছে সাহায্য চাননি তবে কেউ এগিয়ে আসলে স্বাগতম জানাবেন। তার দু'জন বন্ধু আছেন যারা মাঝে মাঝে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সাহায্য করেন।
তপন হতাশার স্বরে আরো জানান, চা বাগানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পাচ্ছেন। কিন্তু নিয়মিত গিয়ে পাঠদান করতে যে যাতায়াত খরচ আসে তা দিয়ে কুলিয়ে ওঠতে না পেরে দুটি ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন চলছে মাইজদিহি চা-বাগান ও প্রেমনগর চাবাগানে দুটি পাঠাশালার কার্যক্রম। তাতে তপন এবং তার নিযুক্ত দু'জন শিক্ষিকার মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান চলছে। পাঠশালাগুলোতে শিশুদের হাতে প্রতি ছয়মাস পরপর নতুন বই, খাতা ও পেনসিল তুলে দেয়া হয়। ঈদ ও পূজায় সামর্থমতো নতুন কাপড় ও শীতে শীতবস্ত্র তুলে দেন।
এফএ/আরআইপি
Advertisement