কক্সবাজার পৌরসভার গোলদিঘিরপাড় এলাকার এক বাড়ি থেকে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের বৌদ্ধমন্দির সড়কের শিয়াইল্ল্যা পাহাড় এলাকা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের চার সদস্যের একসঙ্গে মারা যাওয়ার কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ ও স্বজনরা। তবে কক্সবাজার মডেল থানার ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়ার ধারণা স্ত্রী ও দু’কন্যাসন্তানকে হত্যার পর গৃহকর্তা নিজে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।
Advertisement
নিহতরা হলেন- শহরের বৌদ্ধমন্দির সড়কের শিয়াইল্ল্যা পাহাড় এলাকার ননী গোপাল চৌধুরীর ছেলে সুমন চৌধুরী (৩৩), বেবি চৌধুরী (২৫), অবন্তিকা চৌধুরী (৬) ও জ্যোতি চৌধুরী (৩)। অনেকে মনে করছেন আর্থিক ঋণের ভারে দিশেহারা হয়ে সপরিবারে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন সুমন। কিন্তু সুমনের সে রকম কোনো আর্থিক ঋণের কথা সুমন বা বেবির পরিবারের কাছে কখনো বলেনি স্বামী-স্ত্রী। তাই সবাই একসঙ্গে মারা যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনরা।
সুমন চৌধুরীর বড় ভাই সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা অমিত চৌধুরী জানান, তারা চার ভাইয়ের মাঝে সুমন সবার ছোট তবে সবাই পরিবার নিয়ে যার যার মতো আলাদা। কিন্তু একে অপরের খবরাখবর রাখেন নিয়মিত। দুপুরে খাবার খেতে এসে সবার সঙ্গে সবার দেখা হতো। বুধবারও অফিস থেকে দুপুরের খাবার খেকে এসে সুমনদের সঙ্গে তার দেখা হয়।
তিনি বলেন, সুমন বাইরে দাঁড়িয়ে ছোট মেয়ে জ্যোতিকে কোলে নিয়ে আছে আর বেবি (সুমনের স্ত্রী) মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। খাবারে ধূলাবালি পড়ছে বলে তাদের বাড়ির ভেতর গিয়ে মেয়েটিকে খাওয়াতে বলে আমি খেতে বসি। পরে সুমন স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে বাড়ির ভেতর গিয়ে খেতে বসেছে এটি আওয়াজে বুঝছিলাম। আমি খাবার শেষ করে ২টার দিকে আবার অফিসে চলে যাই। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের দরজা খোলা হচ্ছে না জানার পর ৬টার দিকে পুলিশকে সঙ্গে আবার বাড়ি আসি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, বাড়ির লোকজনদের কাছ থেকে শুনেছি, বিকেল ৫টা সাড়ে ৫টা হয়ে গেলেও সুমনদের ঘর থেকে বের হবার কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে তাদের মুঠোফোনে কল করা হয়। কল ধরছিল না তারা। দরজা-জানালায় ধাক্কা দিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে কষ্টে জানালা একটু ফাঁক করে বেবি হাত ঝুলিয়ে সন্তানসহ শুয়ে আছে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর খাটে শোয়া মা-মেয়ে ও ফাঁসিতে ঝোলা অবস্থায় সুমনকে দেখতে পায়। তবে কী কারণে, কয়েক ঘণ্টার ভেতর পুরো পরিবার লাশ হলো সেটা বুঝে আসছে না।
কোনো ঋণের বোঝা ছিল কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা আলাদা হয়ে গেলেও একজন অপরজনের ভালোমন্দ খোঁজ রাখি। একে অন্যকে সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করি। সপরিবারে আত্মহত্যা করার মতো কোনো অভাবের কথা সুমন বা বেবি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেনি। আর তাদের (স্বামী-স্ত্রী) মাঝেও কোনো কলহ ছিল না।
বেবি চৌধুরীর বড় ভাই সদরের ইসলামাবাদ হিন্দুপাড়া এলাকার সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিয়ের ৮-৯ বছরে বোনের পরিবারে কোনো অভাব-অভিযোগ কিংবা পারিবারিক কলহের কথা শুনিনি। পরিবারে কোনো দৈন্যদশা থাকলে মেয়েরা বাবার পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করে। কঠিন কিছু হয়ে থাকলে বেবি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতো। সুমনদের পরিবার বা আমাদের পরিবারের কেউ কোনো বিষয় জানলাম না। শুধু শুধু একটি গোছানো পরিবারের চারটি সদস্য সবার অজান্তে লাশ হয়ে আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেল।
বেবি চৌধুরীর চাচাতো ভাই পুলিশের উপ-পরিদর্শক প্রকাশ প্রণয় দে বলেন, গত চার মাস আগে আমার বিয়ের সময় সুমন আন্তরিকভাবে খেটেছে। ভগ্নিপতি হলেও বন্ধুর মতো ছিলাম। আমার ধারণা আর্থিক কোনো ঝামেলায় থাকলে অবশ্যই একটুখানি হলেও আমার সঙ্গে শেয়ার করতো। ভাবতে পারছি না, এমন কী ঘটনা ঘটলো- হঠাৎ পরিবারের সবাইকে লাশ হতে হলো?
Advertisement
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন জানান, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও চরম দুঃখজনক ঘটনা। দুই মেয়ে অবন্তিকা ও জ্যোতি এবং স্ত্রী বেবিকে হত্যার পর সুমন নিজেই আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। ভেতর থেকে দরজাটি বন্ধ না থাকলে অন্যকিছু ভাবা যেতো। এখন ধাঁধায় পড়তে হচ্ছে। তাই ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর আসল রহস্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ