খেলাধুলা

একেও তারা, একশতেও তারা

সেঞ্চুরি তো ব্যাটসম্যানরা অহরহ করেন। বোলাররা উইকেটের সেঞ্চুরিও করেন। খেলার মাঠ কেন বাদ যাবে! মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম সেই গৌরবময় সেঞ্চুরিটাই করে ফেললো। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ আর জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার আজ টস করতে নামার পরই ওয়ানডে ক্রিকেটে শততম ম্যাচের স্বাক্ষী হয়ে গেলো মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

Advertisement

উদ্বোধনের পর থেকেই মিরপুর শেরেবাংলা হোম অব ক্রিকেট। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের আগে ক্রিকেট ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক। ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুতেই। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের হোম ভেন্যু ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। কিন্তু মাঠটির একক মালিকানা কিন্তু শুধুমাত্র ক্রিকেটের হাতে ছিল না।

ফুটবলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হতো। বর্ষকালে যখন ফুটবল অনুষ্ঠিত হতো বঙ্গবন্ধুতে, তখন তো ক্রিকেট মাঠের অস্তিতই যেন থাকতো না। উইকেট নষ্ট হয়ে যেতো, কাদায় ভরে উঠতো। বৃষ্টি না হলেও ফুটবলারদের বুটের আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হতো ক্রিকেটের উইকেট।

শেষ পর্যন্ত মিরপুরের ক্রিকেট পেলো আপন ঠিকানা। ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হলো মিরপুরে। সে থেকে মিরপুরের শেরেবাংলাই হোম অব ক্রিকেট। ওই সিরিজের আগের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল খুলনা এবং বগুড়ায়। এরপর চতুর্থ এবং পঞ্চম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হলো মিরপুরে।

Advertisement

২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ছিল ঐতিহাসিক দিন। হোম অব ক্রিকেটে সেদিন প্রসপার উতসেয়ার জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে ১৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে সেদিন বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেছিলেন এমন তিনজন ক্রিকেটার এখনও খেলে যাচ্ছে দেশটির জাতীয় দলের হয়ে।

প্রায় ১১ বছরের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে হয়েছে অনেক উত্থান-পতন। কিন্তু সেই তিন ক্রিকেটার এখনও যেন কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছেন। তারা তিনজন হলেন- হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ব্রেন্ডন টেলর এবং কিস্টোফার এমপোফু। যদিও এমপোফু চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে রয়েছেন; কিন্তু একাদশে সুযোগ পাচ্ছে না। ব্রেন্ডন টেলর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছিলেন মুগাবে সরকারের বর্ণবাদী নীতির কারণে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে তিনি আবারও ফিরে এলেন দলে। মাসাকাদজা তো খেলেই যাচ্ছেন।

মিরপুরের উদ্বোধনী ম্যাচে ছিলেন বাংলাদেশের এমন তিনজন ক্রিকেটার এখনও খেলে যাচ্ছেন। তারা তিনজন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহীম। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, ভেন্যুর শততম ওয়ানডের দিনে দেশের সেরা এই তিন ক্রিকেটার পুরোপুরি দর্শক। বিসিবি কোনো পরিকল্পনাই গ্রহণ করেনি এ নিয়ে। গৌরবোজ্জ্বল এই দিনে এর চেয়ে আর লজ্জার কিছু হতে পারে না।

উদ্বোধনী ম্যাচে জিম্বাবুয়ের মাসাকাদজা করেছিলেন ১৩ রান। টেলর আউট হয়েছিলেন মাত্র ৪ রান করে। মিরপুরের শততম ম্যাচে এসে মাসাকাদজা করলেন ৭৩ রান এবং টেলর করলেন ৩৮ রান। ভেন্যুর উদ্বোধনী ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন কেবল সাকিব আল হাসান। ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ওই ম্যাচে মাশরাফি নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

Advertisement

মিরপুরের শততম ওয়ানডে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করা হলে হয়তো, এই ম্যাচটি খেলা হতো মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকের। রেকর্ডের পাতাটাও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারতো তাদের।

আইএইচএস/আইআই