নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন লক্ষ্য- শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সামনে বড় একটা উপলক্ষ। নিজেদের প্রমাণ করার। বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে এক কথায় ছিনিয়ে নিয়ে গেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। আগামী বিশ্বকাপকে সামনে রেখে শ্রীলঙ্কান নিজেদের ক্রিকেটকে ঢেলে সাজাতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের সামনে এখন একজন ব্যাক্তিই সবচেয়ে বেশি সঠিক বলে মনে হয়েছে। তিনি হাথুরুসিংহে। সুতরাং, বাংলাদশের কোচিং ছেড়ে হাথুরু দায়িত্ব নিলেন নিজ দেশের। ২০১৭ সালের চরম ব্যর্থতায় ভরা একটি বছরকে পেছনে ফেলে লঙ্কানদের এখন লক্ষ্য, হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবারও নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।
Advertisement
মাত্র কয়েকদিন আগেই ভারত সফরে গিয়ে নাকানি-চুবানি খেয়ে এসেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। তার আগে নিজেদের ঘরের মাঠেই জিম্বাবুয়ের কাছে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে তারা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন ছিল; কিন্তু ঘরের মাঠে এভাবে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ হারেনি তারা কখনও। শেষ পর্যন্ত সেই লজ্জায়ও পড়তে হলো তাদের।
সব মিলিয়ে লঙ্কানরা ভেবেছে, এজনমাত্র ব্যক্তিই পারেন, শ্রীলঙ্কাকে এই অবস্থা থেকে টেনে তুলতে। এ কারণেই হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশ থেকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে তারা। সেই হাথুরুর অধীনেই নতুনভাবে সূচনা করতে যাচ্ছে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা।
হাথুরুসিংহে দায়িত্ব নেয়ার পরই পুরোপুরি খোলনলচে বদলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকে যেমন জোর দিয়েছেন, সঙ্গে নিয়োগ দিয়েছেন একজন স্পোর্টস সাইকোলোজিস্ট। হাথুরুর সঙ্গেই বিগব্যাশে চার বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সেই সাইকোলজিস্টের। নেতৃত্বেও পরিবর্তন এনেছেন হাথুরু। শ্রীলঙ্কা দলকে আর কখনও নেতৃত্ব দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। সেই ম্যাথিউজকে আবারও অধিনায়ক হিসেবে ফিরিয়ে এনেছেন হাথুরু।
Advertisement
যে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেলেন হাথুরু, সেই বাংলাদেশেই তার প্রথম চ্যালেঞ্জ। যদিও টিম বাংলাদেশকে পাচ্ছেন না প্রথমে। পাচ্ছেন জিম্বাবুয়েকে। যারা তাদেরই ঘরের মাঠে গিয়ে গত বছর লজ্জায় ডুবিয়ে দিয়ে এসেছে। এই জিম্বাবুয়েই ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে রীতিমত বিধ্বস্ত হয়েছে।
নতুন চ্যালেঞ্জ শুরুর আগে বেশ রোমাঞ্চিত লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে শুরুতেই নতুন সূচনার কথা জানালেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। তার কাছে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের নতুন শুরু, আপনার অভিমত কী?’
জবাবে ম্যাথিউজ বললেন, ‘এটা তো নতুন বছরও বটে। আমরা ২০১৭ সালকে ভুলে যেতে চাই। সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চাই।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তো গত বছর নিজেদের মাঠে সিরিজ হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। বিষয়টা উঠতেই ম্যাথিউজ বললেন, ‘ওই সময় জিম্বাবুয়ে সত্যি অনেক ভালো খেলেছে। আমরা যে খারাপ খেলেছি তা নয়। জিম্বাবুয়েই বেশি ভালো খেলেছে। এ কারণে আমরা জানি, আসলে জিম্বাবুয়ে খুবই ভয়ঙ্কর একটি দল। শুধু তাই নয়, দলটির চলে যাওয়া ক্রিকেটাররা আবারও ফিরে এসেছে। সুতরাং, তারা এখন আরও বেশি শক্তিশালী। আমাদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন হবে এবং আমরা সে দিকেই তাকিয়ে।’
Advertisement
কিন্তু জিম্বাবুয়ে তো বাংলাদেশের কাছে হেরে গিয়েছে। বিষয়টা শ্রীলঙ্কার জন্য কতটা সহজ হবে? ম্যাথিউজ ‘সহজ’ হবে বিষয়টা মানতে মোটেও রাজি নন। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল কী হবে সেটা নিয়েই চিন্তা করছি। এই ম্যাচটা নিয়েই শুধু ভাবছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি কখনওই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারবেন না। আমরা তো জানি, তারা ভয়ঙ্কর একটি দল। যদিও তারা আগেরদিন বাংলাদেশের কাছে হেরেছে। তবুও এটা নিশ্চয়তা দেয় না যে আমরাও জিতবো। ফ্রেশ একটা মানসিকতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। দারুণ একটা সূচনা চাই।’
হাথুরুসিংহে যোগ দেয়াতে কতটা চাপ আছে লঙ্কান ক্রিকেট দলের ওপর? খুব সংক্ষেপে এর উত্তর দিলেন ম্যাথিউজ। তিনি বলেন, ‘নাহ, কোনো চাপ নেই। আমরা অনেক বেশি রিলাক্সড’।
শুধু ফলই নয়, এই সিরিজ থেকে অনেক কিছু অর্জন করতে চান লঙ্কান অধিনায়ক। তাদের লক্ষ্য যেহেতু ২০১৯ বিশ্বকাপ, সে লক্ষ্য সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে চায় লঙ্কানরা। এ কারণেই ম্যাথিউজের কাছে প্রশ্ন ছিল, এই ত্রিদেশীয় সিরিজে জয়ের চেয়ে ভিন্ন কোন জিনিসটা তারা অর্জন করতে চায়?
জবাবে ম্যাথিউজ বলেন, ‘এই সিরিজে একটি দল হিসেবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করাটাই আমাদের বড় লক্ষ্য। একই সঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেলা। প্রতিটি ম্যাচেই আমরা উন্নতি করতে চাই। জয় তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন আপনি ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একটি দল তৈরি করার চিন্তা করবেন, তখন আপনাকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নজর দিতে হবে। এ কারণে একটি শক্তিশালী দল গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ক্রিকেটও খেলতে হবে। শুধুমাত্র জয়ের চিন্তা করাই নয়, সঠিক কাজটি করে যেতে পারলে জয় এমনিতেই ধরা দেবে।’
আগের ম্যাচে হেরে যাওয়ার কারণে জিম্বাবুয়েও চিন্তা করছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। শ্রীরঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে জিম্বাবুয়ের সিনিয়র ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা সে আশাবাদই দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল আমাদের সামনে ভিন্ন প্রতিপক্ষ। টুর্নামেন্টে আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি। অবশ্যই আমরা চেষ্টা করবো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর।’
আইএইচএস/এমএস