ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে ৭ কলেজের অধিভুক্তিবিরোধীদের আন্দোলন পণ্ড

৭ কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে পণ্ড হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এ কাজে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ককে উপাচার্যের কক্ষে নিয়ে টর্চার, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও সাংবাদিক লাঞ্ছনা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Advertisement

আজ সোমবার সকাল থেকে ক্লাস বর্জনসহ বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। অবরোধ করা হয় রাজু ভাস্কর্যের সামনের সড়ক। দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ঠেকাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী আসেন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিক্ষোভ ঠেকাতে ছাত্রলীগকে ডেকে আনেন।

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে এসে বিষয়টির সমাধানে ভিসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজি না হয়ে ভিসিকে ঘটনাস্থলে আসার দাবি করেন।

তখন ছাত্রলীগ নেতারা আন্দোলনকারীদের হুমকির সুরে বলেন, ‘তোমরা না আসলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।’ ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেয়া হয় বেশ কয়েকজনকে। এ সময় অন্য নেতাদের দিয়ে জোর করেও ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি না হওয়ায় আবারও ভিসির কক্ষে ফিরে যান ছাত্রলীগ নেতারা। সেখানে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে পরামর্শ করেন ছাত্রলীগের নেতারা। এক পর্যায়ে নেতাদের নির্দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মশিউর রহমান সাদিকের মুখে হাত দিয়ে টেনে হেঁচড়ে আন্দোলনকারীদের থেকে ভিসির কক্ষে নিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমানসহ অন্য হলের নেতাকর্মীরা। এ সময় ভিসির কক্ষে তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়।

Advertisement

তবে এ অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘কাউকে হেনস্তা করা হয়নি। সমন্বয়ককে ধাক্কা দিয়ে সরানোর কোনো সুযোগ নেই।’

শিক্ষার্থীকে টর্চারের বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তখন আমি পাশের রুমে ছিলাম। আমিতো জানি না। একটি ছেলে আমার কাছে এসেছে, সে হাসি মুখে এখান থেকে চলে গেছে। আমি তাকে আমার বিষয়গুলো ব্রিফ করেছি। তাকে বলেছি যেন সে এগুলো অন্যদেরও বলে।’অন্যদিকে ভিসির কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যেতে আন্দোলনকারীদের উপর চলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জোর প্রয়োগ। সরতে না চাইলে ধাক্কা দিয়ে তাদের সরানো হয়। বিভিন্নভাবে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের নেতারা উত্ত্যক্ত করে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের। আন্দোলনকারীদের ছবি তুলতে গিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেত্রী ও এক নেতার হাতে লাঞ্ছিত হন ক্যাম্পাসে কর্মরত দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের রিপোর্টার মামুন তুষার। সাংবাদিক পরিচয় দিলেও আরো ক্ষেপে গালাগালি করেন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের হল শাখার তিন নেত্রী হলেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগ কাউকে উত্ত্যক্ত করে বলে আমি বিশ্বাস করি না। যদি করে থাকে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সাংবাদিক লাঞ্ছিতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ এমন করে থাকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আর উপাচার্য বলেন, ‘যখন এভাবে দুই তিন দিন ধরে এরকম চলতে থাকে তখন অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের বিষয়টি ঠিক জানি না। কোনো ছাত্রীকে কি করা হয়েছে তা বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডি খতিয়ে দেখবো।’

Advertisement

তবে আন্দোলনে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নিয়েছে এটা বলা যাবে না। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ছিল। ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার কথা বলার কোনো কারণ নেই। তারা আমার কাছে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে জানতে চেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে, সেগুলো আমরা আরো জোরদার করবো। তাদের সব সমস্যা মেনে নিয়ে আমরা সেগুলো সমাধানের কথা আগেও বলেছি এখনও বলছি।’

এর আগে আজ পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস বর্জন করেছে আন্দোলনকারীরা। বেশির ভাগ বিভাগেই ক্লাস হয়নি। সকাল সাড়ে ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে একটি মিছিল কলা ভবন, ব্যবসায়ে শিক্ষা অনুষদ হয়ে সূর্যসেন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, শহীদ মিনার হয়ে কার্জন এসে এখানকার বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে পুনরায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে সাড়ে ১১টা থেকে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এ সময় আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

এমএইচ/জেএইচ/আরআইপি