জাতীয়

ফুটপাত দখলের নেপথ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের চলাচল রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে। গুলিস্তানের পরই সবচেয়ে বেশি মানুষের পদচারণা থাকে সেখানে। দিন রাতের সবসময়ই গিজগিজ করে মানুষ।

Advertisement

যে ফার্মগেটে এত পথচারী অথচ সেখানে ফুটপাত ধরে হেঁটে চলাচল করার কোনো সুব্যবস্থা নেই। দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না ফার্মগেটের ফুটপাতগুলো। পুরো ফুটপাতজুড়েই গিজগিজ করছে দোকান। পথচারীদের হাঁটার জায়গা দখল করে নানা রকমের বাজার সাজিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদার। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই সেখানে। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে এসেছেন মূল সড়কে। যে কারণে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে তো থাকছে পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকাজুড়ে ফুটপাতে দোকানের আধিক্য অসহনীয়। ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রাজধানীর হকাররাও এসব সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। প্রতিদিনই চলছে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তাদের এ আধিপত্য। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ করার পরও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাতগুলো। ফুটপাত দখল করা হকারদের কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার তেজগাঁও কলেজের সামনের মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিয়া খাতুন। পেছনেই সিএনজি অটোরিকশাচালক হর্ন বাজিয়ে বলছিলেন' আপা একটু সাইড দিয়ে হেঁটে যান'। চালকের কথা শুনে রাফিয়া খাতুন বলছেন 'কোথায় যাব? ফুটপাতে দোকান, রাস্তায় গাড়ি, বিপাকে আমাদের মতো পথচারী'। কথা হয় রাফিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরো ফার্মগেটেই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। সবগুলো ফুটপাতে অতিরিক্ত দোকান, তার মধ্যে মানুষের হেঁটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এত ভিড় থাকে যেখানে পুরুষ মানুষই হাঁটতে পারে না আর আমরা মেয়ে মানুষ কীভাবে হাঁটব?

Advertisement

পথচারীদের চলাচলের জন্য থাকা ফুটপাতে কেন আপনাদের দোকান এমন প্রশ্নের জবাবে ফার্মগেটের ফুটপাতের দোকানি মোস্তাক আহমেদ বলেন, টাকা দিয়ে দোকান বসাইছি, আবার প্রতিদিন চাঁদাও দিতে হয়। মানুষও হাঁটুক আমাদেরও ব্যবসা হোক। ফুটপাতে দোকান না বসালে কই যামু, বাজারে দোকানঘর নেয়ার মতো তো পুঁজি নাই। তাই প্রতিদিন লাইনম্যানকে টাকা দিয়ে দোকান চালাই।

ফার্মগেটে ফুটপাতে শীতের কাপড়ের দোকান দিয়েছেন রবিউল ইসলাম। সাত বছর ধরে এখানে দোকান চালান তিনি। আলাপকালে রবিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে দোকান করি। মৌসুম বুঝে বিভিন্ন ব্যবসা করি। ব্যবসার খাতিরে দোকান চালাতে গিয়ে অনেকবার উচ্ছেদ হয়েছি কিন্তু আবার ফিরে এসেছি। নগদ টাকা লাইনম্যানকে দিয়ে ব্যবসা করে টিকে আছি। তিনি বলেন, ফুটপাত আসলে মানুষের হাঁটার জন্য কিন্তু আমরা এখানে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে খাচ্ছি। আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। কারণ এখানে অনেক শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে যারা প্রতিদিন চাঁদা নেয়। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ অভিযানের পরও আমরা ফিরে এসে আবার দোকান নিয়ে বসতে পারি। যারা দখল করে রেখেছে তাদের কাছে আপনারা কিছুই না।

হকার সূত্রে জানা গেছে, শার্ট, প্যান্টের ছোট দোকানের জন্য প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আর জুতা ও আরেকটু বড় দোকানের জন্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় তাদের। কিন্তু এসব টাকা মূলত কাদের হাতে যাচ্ছে এর উত্তর দিতে নারাজ তারা। তাদের ভাষায় তারা শুধু লাইনম্যানকেই চেনে যারা এসে প্রতিদিন টাকা নিয়ে যায়।

ফার্মগেটে ফুটপাতে পথচারীদের চলাচলের কোনো পরিস্থিতি নেই, পুরো এলাকা হকারদের দখলে এসব বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম অজিয়র রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমরা খুবই তৎপর। যে কারণে মাঝে মধ্যেই এ এলাকায় আমরা অভিযান পরিচালনা করি। যেহেতু এগুলো স্থায়ী দোকান না সে কারণে আমাদের অভিযানের সময় তারা সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে পালায়, আবার এসে বসে। তাই সবসময় আমরা মনিটরিং করতে পারি না। তবে এ বিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপে যাচ্ছি, আশা করি আগামীতে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাত আর দখলে থাকবে না। খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।

Advertisement

পরিবেশবীদের মতে, হাঁটার নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যাই বেশি। অপর্যাপ্ত ও হাঁটার অনুপযোগী ফুটপাত এবং রাস্তা পারাপারের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীদের আগ্রহ থাকার পরও তারা হাঁটতে পারছেন না। পথচারীদের হাঁটার পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের মূল রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

এএস/ওআর/আরআইপি