অর্থনীতি

মেলায় অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি

‘এক্সকিউজ মি, ছোট বাচ্চাদের খেলনা আর পোশাকের স্টলগুলো কোন দিকে- বলতে পারেন। অনেক খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। ছেলের বায়না পূরণ করতে মেলায় এসে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত এ দর্শনার্থী মা। নাম আদিবা জাহান। শেষ পর্যন্ত অন্য ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলেন। যাকে জিজ্ঞাসা করছেন, তিনিও ঠিক বলতে পারছেন না।

Advertisement

আদিবা জাহানের মতো অনেকেই আছেন যারা মেলায় কেনাকাটার জন্য আসেন। কিন্তু মেলার স্টল বিন্যাস ও দিকনির্দেশনা না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অনেককে।

প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় থাকে বাহারি পণ্যের সমাহার। শেষ পর্যায়ে এসে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে ভিড় থাকে লক্ষণীয়। কিন্তু যে ক্রেতাদের ঘিরে এ মেলার আয়োজন তাদেরই রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মেলায় এলোমেলো স্টল বিন্যাসের কারণে পছন্দের পণ্য কিনতে ক্রেতাদের ঘুরে হয়রান হতে হচ্ছে। একই ধরনের পণ্যের প্রদর্শনীর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো স্থান রাখা হয়নি। যে কারণে কোম্পানি ভেদে পণ্যের মান ও দাম যাচাই করে পণ্য কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এরপরও প্রতিদিন বাড়ছে বাণিজ্য মেলায় বিক্রি ও দর্শনার্থীর সংখ্যা। অভিযোগ রয়েছে স্টল মালিকদেরও।

ক্রেতাদের অভিযোগ, মেলায় একই ধরনের পণ্যের প্রদর্শনীর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো স্থান রাখা হয়নি। দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্য, আসবাব, অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের বিভিন্ন ধরনের কিচেন সামগ্রী, খাদ্যপণ্য ও কনফেকশনারি, মনিহারি পণ্য, গয়না, আমদানি করা এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোনসেট- সব ধরনের পণ্যের স্টলই আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোও প্রায় বিক্ষিপ্ত। যে কারণে কোম্পানি ভেদে পণ্যের মান ও দাম যাচাই-বাছাই করে কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে।

Advertisement

গাজীপুর থেকে মেলায় আসা হোসাইফা রহমান জানান, ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঘুরে কাঙ্ক্ষিত পণ্য খুঁজে পেলাম না। এছাড়া একই ধরনের পণ্যের স্টলগুলো দূরে দূরে। যে কারণে যাচাই-বাছাই না করেই পণ্য কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, মেলায় ভলান্টিয়ারও নেই। যাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে। নির্দেশনা বোর্ড কিংবা সাইন বোর্ডও চোখে পড়েনি। কাউকে জিজ্ঞাসা করলে তারাও বলতে পারছে না।

মেলার প্রবেশ দ্বারে একটি লে-আউট দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে রয়েছে মেলার স্টল নম্বর। এর বাইরে কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়নের পাশে ইপিবি সেন্টারে গেলে হয়তো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। কিন্তু একবার মেলার একপ্রান্তে চলে গেলে ইপিবি সেন্টারে পৌঁছাতে লম্বা সময় পার হয়ে যায়।

মিরপুরের দর্শনার্থী মৌমি রহমান বলেন, ভারতে এ ধরনের বাণিজ্য মেলায় সেখানকার বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের থিম নিয়ে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। এখানে ওই ধরনের ব্যবস্থাপনা থাকলে দর্শনার্থীদের জন্য সুবিধা হতো।

Advertisement

এছাড়া বিনোদনের জন্য দুটি মিনি শিশু পার্ক থাকলেও বাচ্চাদের পছন্দের পণ্যের আলাদা কোনো কর্নার নেই মেলায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত পণ্যের বদলে আমদানি করা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় অংশগ্রহণ না থাকায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ প্যাভিলিয়নের কিছু অংশ দেশের প্রতিষ্ঠানকেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইরানি পণ্যের সমাহার লেখা প্যাভিলিয়নের অর্ধেকজুড়ে রয়েছে দেশি পণ্য।

অন্যবারের তুলনায় এবার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো থাকলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের। এ প্রসঙ্গে মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আবদুর রউফ বলেন, মেলা আয়োজন ২৩ একর এলাকাজুড়ে। এতো বড় মেলায় হঠাৎ করে কেউ আসলে সমস্যা তো একটু হবেই। মেলার সবকিছু সুশৃঙ্খলভা্বে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য ইপিবি সেন্টারে সব সময় লোক আছে। তারা সবরকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে গুরুতর কোনো অভিযোগ আসেনি।

এমএ/এমএআর/আরএস