অর্থনীতি

পাটের কোনো অংশই ফেলনা নয়

সোনালি আঁশ বলে খ্যাত পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বেড়েছে। এর সোনালী আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। আগে পাটকাঠির তেমন ব্যবহার ছিল না। এখন সেই পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল, যা বিদেশে রপ্তানিও শুরু হয়েছে।

Advertisement

পাট থেকে সুতার কাঁচামাল ভিসকস তৈরি এবং সেই ভিসকস থেকে তৈরি হচ্ছে ডেনিম কাপড়। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন ২এ-এর ইনোভেশন কর্ণারে প্রদর্শিত হচ্ছে এসব উদ্ভাবনী পণ্য।

বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পাটের কোনো অংশই ফেলনা নয়। এর সব অংশ থেকে মূল্যবান পণ্য উৎপাদন সম্ভব। বিষয়টি জনগণকে জানানোর জন্য এ প্রদর্শনীর আয়োজন।

প্যাভিলিয়নে দায়িত্বরত বিজেএমসি’র ম্যানেজার (মার্কেটিং) মো. জাকির হোসাইন খান বলেন, পাটের আঁশ থেকে ভিসকস উৎপাদন আমাদের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ভিসকস উৎপাদন করেছি। বড় পরিসরে ভিসকস উৎপাদনে একটি প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদনের জন্য দেয়া আছে। যদি অনুমোদন পাওয়া যায় তাহলে পাটের আঁশ থেকে আরো একটি মূলবান পণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। পাটের কদর আরো বাড়বে।

Advertisement

তিনি বলেন, ভিসকস হলো সুতার প্রধান কাঁচামাল। এটি এক ধরনের রেশম, যা দিয়ে সুতা তৈরি হয়। ভিসকস দেখতে সুতার মতো কিন্তু সুতার থেকেও সূক্ষ্ম। ভিসকস ব্যবহার হয় তুলার বিকল্প হিসেবে সুতা তৈরির কাজে। এটি দিয়ে তৈরি সুতা হয় মিহি ও সূক্ষ্ম। এ সুতা দিয়ে তৈরি পণ্যের গুণগত মান বেশ উন্নত।

তিনি আরো বলেন, শুধু পাটের আঁশ নয় পাটকাঠি থেকেও তৈরি হচ্ছে মূল্যবান পণ্য চারকোল। যা বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি শুরু করেছে। উদ্ভাবনী পণ্যটিও বিজেএমসি উৎপাদন করতে চায়। এ জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবও একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

এসব পণ্য বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শনের বিষয়ে জাকির হোসাইন খান বলেন, বাংলাদেশে পাট খুব সহজেই উৎপাদন হয়। এ পাটের যে বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে অর্থাৎ পাটের কোনো অংশই ফেলনা নয়, বিষয়টি জনগণকে জানাতে এসব পণ্য প্রদর্শন করছেন তারা।

এদিকে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশে পাট থেকে ভিসকস উৎপাদন শুরু করতে চায় তারা।

Advertisement

ভিসকস উৎপাদনের জন্য কারখানা প্রস্তুত রয়েছে। জায়গাও প্রস্তুত। মেশিনারিজ থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল হ্যান্ড সবকিছু রেডি (প্রস্তুত)। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা।

আগে পাটকাঠি বা পাটখড়ি অনাদরে-অবহেলায় পড়ে থাকলেও এখন চারকোল তৈরির মিলে তা ব্যবহৃত হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকও।

পাটখড়ি বা পাটকাঠির কার্বন চারকোল নামে পরিচিত। চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, ফেসওয়াশের উপকরণ ও প্রসাধনী পণ্য, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি হয়।

বর্তমানে চীন ছাড়াও তাইওয়ান, জাপান, হংকং ও ব্রাজিলে চারকোল রপ্তানি হচ্ছে। এর বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা,জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

বাংলাদেশ চারকোল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির তথ্য মতে, গত বছরও ১৫০ কোটি টাকার চারকোল বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। পণ্যটি বিজেএমসিও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে চায়।

এমইউএইচ/এমএআর/আরএস