দেশজুড়ে

৬৫ হাজারের একটি কাতল নিয়ে দাম কষাকষি

মূলত এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। জ্বি, বলছিলাম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলার কথা। আর এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এক টিকেটে দুই ছবি! বলাটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না, এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেচা।

Advertisement

কারণ এটা মাছের মেলা হলেও, এখানে চলে এলাকার জামাইয়ের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাইরা হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী। তাছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার শ্বশুরদের মধ্যেও চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন শ্বশুর সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে জামাই আপ্যায়ন করতে পারে। আবার জামাইরাও চান কোন জামাই কত বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার মাঠ।

৪০ কেজি ওজনের একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। মাছের নাম কাতল। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৬৫ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় চুপাইর এলাকার জামাই নুরুল ইসলাম মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যতনা ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য। পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিন রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার জামালপুর, মোক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য।

উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।

Advertisement

এবারের মেলায় প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও।

বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু জানান, অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে মেলাটি প্রথমে ক্ষুদ্র পরিসরে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন করে আসছে এলাকার মুরুব্বিরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় কলাপটুয়া গ্রামের মতিউর রহমানের সেঙ্গ। তিনি জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আব্দুর রহমান আরমান/এমএএস/আরআইপি

Advertisement