গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় খালকে নদী দেখিয়ে চলছে ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ। আর এই খননের ফলে খালের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শতাধিক বসতবাড়ি স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। খনন অব্যাহত থাকলে এসব বাড়িঘর ও স্থাপনা খালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ী, স্থাপনা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েবে ওই এলাকার মানুষ।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন `মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ নৌ-পথ খনন` (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোস্তফাপুর হতে পয়সারহাট পর্যন্ত ড্রেজিং এর জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে মোস্তফাপুর হতে পয়সারহাট পর্যন্ত খাল খননের জন্য দু’টি অংশে ভাগ করা হয়। একটি অংশ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট হয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পীড়ারবাড়ী পর্যন্ত। অপর অংশ কোটালীপাড়ার পীরারবাড়ী হতে মাদারীপুর জেলার মোস্তফাপুর পর্যন্ত।টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে কোটালীপাড়ার পীড়ারবাড়ী হতে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট পর্যন্ত খননের কাজ পায় অ্যাকোয়া মেরিন ড্রেজিং নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।সরেজমিনে দেখা গেছে, রামশীল ও মুশরিয়ায় দু’টি হেভি ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খাল খননের কাজ কাজ করা হচ্ছে। ড্রেজিং এর ফলে রামশীল ও মুশরিয়া গ্রামের খাল পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ওই দু`গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।এ বিষয়ে মুশরিয়া গ্রামের লক্ষণ মিস্ত্রি জাগো নিউজকে জানান, খাল খননের ফলে তার বাড়িটি হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘরবাড়ি খালের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। আতংক ও আশংকার মধ্যে তাদের দিন কাটছে। তিনি বলেন,অবিলম্বে এই খনন কাজ বন্ধ করা না হলে আমাদের এলাকার শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে।মুশরিয়া গ্রামের কৃষক আন্দ্রিয় বাড়ৈ (৮০) জাগো নিউজকে জানান, খাল খনন শুরু করার পর দু`পাড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ইতিমধ্যে আমার দু`বিঘার একটি পুকুর ভাঙনের কবলে পড়েছে। পুকুরের পশ্চিম পাড় ভেঙে খালের গর্ভে বিলিন হয়েছে।এই পুকুরে মাছ চাষ করে আমার সংসার চলতো।রামশীল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাষ হালদার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ওয়াবদার খালকে কুমার নদী দেখিয়ে খনন কাজ করা হচ্ছে। আমাদের এই খাল খননের কোনো প্রয়োজন নেই। খাল খনন করে আমাদের গাছপালা নিধন করা হচ্ছে। বাড়িঘর নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।পীরারবাড়ী-পয়সারহাট ওয়াবদার খালটি নদী না খাল, জানতে চাওয়া হলে বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী এরশাদ জাগো নিউজকে জানান, এটি নদী না খাল তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের সার্ভেয়াররা এটিকে কুমার নদী দেখিয়েছে।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অ্যাকোয়া মেরিন ড্রেজিং কোম্পানির সাইড ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, খননের ফলে নদীর দু`পাড়ের কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন চন্দ্র বালা জাগো নিউজকে জানান, খাল খননে এলাকার অনেকের বসতবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। অনেক বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। খাল খননে এলাকাবাসীর উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাই তিনি খনন কাজ বন্ধের দাবি জানান।এস এম হুমায়ূন কবীর/এমজেড/আরআই
Advertisement