খেলাধুলা

সিমিং কন্ডিশন হলেও যে কারণে জ্বলে উঠতে পারেন সাকিব

তিনি সব্যসাচী ক্রিকেটার। বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। বল ও ব্যাট হাতে সমান কার্যকর সাকিব আল হাসান তাই বাংলাদেশের চালিকাশক্তি।

Advertisement

জাদুকরি স্পিন ঘূর্নিতে ২২৬ উইকেট শিকারের পাশাপাশি যিনি পাঁচ হাজারি ক্লাবেরও সদস্য। ১৮০ খেলায় ১৭০ ইনিংসে ২৪ বার নটআউট থাকা সাকিবের ওয়ানডে রান ৫০৮০।

আজকাল সীমিত ওভার ক্রিকেটের কৌশল বদলে গেছে। এখন স্পিনাররাও বোলিংয়ের সূচনা করছেন অহরহ। সাকিবকেও ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সে রূপে দেখা গেছে। তবে ব্যাটসম্যান সাকিবকে সবাই চেনেন, জানেন মূলতঃ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। বলের পাশাপাশি ব্যাট হাতে সমান পারদর্শি ও কার্যকর সাকিব মূলতঃ মিডল অর্ডার।

একদিনের ক্রিকেটে সাকিবের মূল ব্যাটিং পজিশন হলো পাঁচ নম্বর। ১৭০ ম্যাচের মধ্যে সর্বাধিক ১২২ বার পাঁচ নম্বরেই ব্যাটিংয়ে নেমেছেন সাকিব। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলাই শুধু নয়, তার রেকর্ড ওই পজিশনেই সবচেয়ে ভাল ও সমৃদ্ধ।পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সাকিব ৮৩.৫০ স্ট্রাইকরেট আর ৩৫.৪৪ গড়ে ৪৪৯৯ রান করেছেন। তার মোট সাত ওয়ানডে শতরানের পাঁচটি ওই পাঁচ নম্বরেই। ৩৫ হাফ সেঞ্চুরির ২৯টিও ওই পজিশনেই।

Advertisement

ইতিহাস জানাচ্ছে, এর বাইরে তিন, চার, ছয় ও সাত নম্বরেও ব্যাট করার রেকর্ড আছে সাকিবের। তবে তিন আর সাত নম্বরে খেলেছেন মোটে দুটি করে ম্যাচ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দুই পজিশনে ব্যাটিং করতে নামা সাকিবের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ। তিন নম্বর পজিসনে দুই খেলায় ব্যাট করা সাকিবের রান ২৯ । সর্বোচ্চও ২৯। গড় ১৪.৫০, স্ট্রাইকরেট ৬৩.০৪।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিবকে প্রথম তিন নম্বরে পাঠানো হয়। কিন্তু তাতে শুন্য রানে সাজঘরে ফেরত আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আর এবার, মানে গত বছর অক্টোবরে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ম্যাচে আবার ওয়ান ডাউনে ব্যাট করেন সাকিব। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর কিম্বার্লিতে হওয়া সে ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৪৫ বলে ২৯। স্ট্রাইকরেট ৬৪.৪৪।

এছাড়া সাকিব চার নম্বর পজিশনেও ৩০ বার ব্যাট করেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরুই করেছিলেন চার নম্বর পজিশন দিয়ে। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে সাকিব চার নম্বরে নেমে খেলেছিলেন হার না মানা ৩০ রানের (৪৯ বলে) ইনিংস।

সে ম্যাচে শাহরিয়ার নাফীসের ম্যাচ জেতানো শতক (১৪৮ বলে ১১৮ নট আউট) আর সাকিবের ইনিংসটি বাংলাদেশকে নিয়ে যায় জয়ের বন্দরে। টাইগাররা পায় ৮ উইকেটের জয়। চার নম্বর পজিশনে সাকিবের মোট রান ৯৫৯। গড় ৪১.৬৯। স্ট্রাইকরেট ৭৮.২২ । দুটি সেঞ্চুরিও আছে। আর পঞ্চাশের ঘরে পা রাখেন চার বার।

Advertisement

আরও একটটি উল্লেখযোগ্য তথ্য, ওয়ানডেতে সাকিবের টপ স্কোর (১৩৪*) কিন্তু চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমেই। এছাড়া ছয় নম্বরেও ১৪ ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেখানেও আহামরি সাফল্য নেই। দুটি ফিফটি আছে। স্ট্রাইকরেট ৬৮.৭৭, রান ৩১৫। সর্বোচ্চ ৭৯।

এর বাইরে দর্শক, ভক্তরা সাকিবকে সাত নম্বরে দু'বার ব্যাট করতে দেখেছেন। প্রথম বার তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাইয়ে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (২৯ বলে ১৫) আর শেষ ২০০৯ সালের ৩১ অক্টোবরে শেরে বাংলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (৫*)। কাজেই পরিসংখ্যান বলছে, সাকিব মিডল অর্ডার মানে পাঁচ নম্বরেই বেশি সফল। কিন্তু এবার তিন জাতি ক্রিকেটে তাকে তিন নম্বরে খেলানোর জোর চিন্তা চলছে।

ব্যাটসম্যান সাকিব বরাবরই ড্যাশিং। উইকেটে গিয়েই আক্রমনাত্ম শটস খেলতে পছন্দ করেন। অফস্টাম্পের বাইরে গালি-পয়েন্টের মাথার ওপর দিয়ে ফ্ল্যাশ, স্কোয়ার কাট তার খুব পছন্দের শট। যাকে তাকে দুম করে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারার ক্ষমতাও যথেষ্ট।

মোদ্দা কথা, উইকেটে থাকার চেয়ে রান গতি সচল রাখার কাজেই সাকিব বেশি মনোযোগী। তাই বলে তিনি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন না, কিংবা তার বড় ইনিংস নেই; তা বলার কোনোই অবকাশ নেই। তামিমের পর শুধু রান তোলায়ই সাকিব দ্বিতীয় নন, সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিয়ান হিসেবেও সাকিব দ্বিতীয়।

তবে প্রচন্ড শীত, কুয়াশা আর কনকনে বাতাসের কারণে সিমিং কন্ডিশনে সাকিবকে তিন নম্বরে খেলানো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। যদিও ইতিহাস সাক্ষী, সাকিবের একমাত্র টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে শতভাগ সিমিং কন্ডিশনেই। হার কাঁপানো শীত, প্রচন্ড বাতাস আর দ্রুত গতি ও বাউন্সি ট্র্যাকেও ওয়েলিংটনে টিম সাউদি আর ট্রেন্ট বোল্টের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে সাহসী শট খেলেই (২৭৬ বলে ৩১ বাউন্ডারিতে ২১৭) ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সাকিব।

সিমিং কন্ডিশনে পেসারদের চেপে বসতে দিলেই বিপদ। সাহসী সাকিব এটা খুব ভালো জানেন। বোঝেন। আর তাই অমন কন্ডিশনে ভড়কে না যেয়ে বরং ‘এ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স’ মন্ত্রে প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য স্পৃহা কাজ করে তার ভিতরে।

এবার শেরে বাংলায় তিন জাতি ক্রিকেটে হিমশীতল আবহাওয়ার কারণে যদি সিমিং কন্ডিশন হয়েও যায়, তাতে কি? লঙ্কান আর জিম্বাবুয়ান ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে সাকিবের ওই সাহসী আর তেজোদ্দীপ্ত ব্যাটিংটাই হতে পারে কার্যকর দাওয়াই।

এআরবি/এমএমআর/আইআই