খেলাধুলা

স্ট্রাইকরেট বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ বিজয়ের

তার দলে ফেরাকে দুই ভাবে দেখা হচ্ছে। একপক্ষ বলছেন এনামুল হক বিজয়ের সামনে আবার নিজেকে প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটাই বিজয়ের শেষ চান্স। কারণ সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ওপেনিংয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বি বেশ ক'জন। এ মুহূর্তে সৌম্য সরকার আর লিটন দাসের ফর্ম খারাপ বলেই আসলে ডাক পাওয়া। ওই দু'জন ফর্মে থাকলে বিজয়কে বিবেচনায় আনা হতো কিনা সন্দেহ।

Advertisement

এর পরও ইমরুল কায়েস আছেন। মোহাম্মদ মিঠুনও ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। কাজেই দৌড়ে টিকে থাকতে হলে বিজয়কে আগের চেয়েও ভাল খেলতে হবে। রানও করতে হবে এবং স্ট্রাইকরেটে উন্নতি ঘটাতে হবে। শেষের পক্ষর কথা শুনে খানিক নেতিবাচক মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই কঠিন বাস্তবতা। এনামুল হক বিজয়ের আগের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসা ছাড়া পথ নেই। এমন নয়, যাদের কথা বলা হলো বিজয় তাদের চেয়ে খারাপ ব্যাটসম্যান। কিংবা তার ট্র্যাক রেকর্ড খুব খারাপ। মোটেই তা নয়। বরং তার পরিসংখ্যান তামিম আর শাহরিয়ার নাফীসের পর বাংলাদেশের যে কোনো ওপেনারের চেয়ে সমৃদ্ধ। শুরুতে বিজয়ের ব্যাটে ছিল রানের ফলগুধারা।

এখন ওপেনার হিসেবে যিনি প্রায় বিশ্বমানের, সেই তামিম ইকবালও যা করতে পারেননি; ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুতে বিজয় তা করে দেখিয়েছেন। শুধু তামিম কেন? শাহরিয়ার নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল, হাবিবুল বাশার, মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহসহ বাংলাদেশের কোনো স্পেশালিস্ট ওপেনার বা জেনুইন ব্যাটসম্যান; কারোই ক্যারিয়ারেই প্রথম ২০ ওয়ানডেতে তিনটি সেঞ্চুরি নেই। বেশির ভাগ ক্রিকেটার ২০ ম্যাচে শতরানের দেখাই পাননি। সেখানে বিজয় তিন তিনবার তিন অংকে পা রাখেন। কিন্তু অমন উল্কার গতিতে শুরু করেও ধীরে ধীরে অনিয়মিত, এক সময় জায়গা হারিয়ে ফেলেন বিজয়। অবশ্য তার বাদ পড়ার পিছনে সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রভাবের কথাও শোনা যায়। শোনা যায়, বিজয়ের ব্যাটিং শৈলি আর স্টাইল নাকি পছন্দ করতেন না হাথুরু। তামিম ছাড়া অন্য ওপেনারদের ভিতরে ম্যাচ পিছু রান, গড় ও সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানোয় তেমন পিছিয়ে নেই বিজয়। কিন্তু তারপরও সাবেক কোচ তার ব্যাটিং এ্যাপ্রোচটা পছন্দ করতেন না। বিজয়ের যেটা মূল সমস্যার জায়গা, সেখানেই চোখ ছিল হাথুরুর।

পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, স্ট্রাইকরেটে সমসাময়িক অন্য ওপেনারদের চেয়ে পিছিয়ে বিজয় (স্ট্রাইকরেট ৭০.০০)। সেখানে তামিম (৭৮.৩৬), সৌম্য (৯৬.৬০) আর লিটন দাস (৭৬.৭৪) তার ওপরে। শুধু ইমরুল কায়েসের স্ট্রাইকরেটই ( ৬৭.৯৩) বিজয়ের চেয়ে কম।

Advertisement

কিন্তু তারপরও ইমরুল বিবেচনায় বেশি আসেন। কারণ, বাকিদের চেয়ে একটু স্লথ হলেও ইমরুলের ব্যাটে ধারাবাহিকতা তুলনামূলক বেশি। আর নতুন বলে তামিম ইকবালের সাথে তার রসায়নটাও বেশ। তাই বাঁহাতি ইমরুল ঘুরে ফিরে বিবেচনায় চলে আসেন।

ফর্মের শিখরে থাকা সৌম্যর মতো উইকেটের সামনে ও দু'দিকে বিগ হিট হাঁকাতে না পারলেও স্ট্রোক মেকার হিসেবে বিজয়কেও খুব পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন অবলীলায়। অনেক ভালো বলকেও কভার, এক্স্ট্রা কভার আর মিড অন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে পারেন। তারপরও তার ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ ইনিংসেই দেখা যায়, বলের তুলনায় রান তোলার গতি স্লথ।

বেশি না, আন্তর্জাতিক আঙিনায় বিজয় যে তিনটি শতক আর সমান সংখ্যক হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, সে ইনিংসগুলোর দিকে একবার তাকালেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। সংক্ষেপে বলে নেয়া যাক আগে, বিজয়ের তিন ওয়ানডে সেঞ্চুরি আর ছয় হাফ সেঞ্চুরির একটারও স্ট্রাইকরেট একশ' না।

তার প্রথম শতরানের ইনিংসটি ছিল ৮২.৭৫ স্ট্রাইকরেটে। ১২০ রানের ইনিংস সাজাতে বিজয় বল খেলেছিলেন ১৪৫টি।

Advertisement

দ্বিতীয় শতক আরও স্লথ, ৭৫.৭৫ স্ট্রাইকরেটে (১০০ রান আসে ১৩২ বলে)। তৃতীয় সেঞ্চুরির স্ট্রাইকরেট ৭৮.৯৮ ( ১০৯ রান করতে বিজয়ের লাগে ১৩৮ বল)। এছাড়া যে তিনটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন সেগুলোও স্লথ-যথাক্রমে ১০৬ বলে ৭৭ (স্ট্রাইকরেট ৭২.৬৪), ১১০ বলে ৮০ (স্ট্রাইকরেট ৭২.৭২) এবং ১২০ বলে ৯৫ (স্ট্রাইকরেট ৭৯.১৬)।

এই স্ট্রাইকরেটেই বিজয়কে সৌম্যর অনেক পিছনে ঠেলে দিয়েছে। এমনিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে সৌম্যর স্ট্রাইকরেট ৯৬.৬০। শুধু তাই নয়, তার ব্যাট থেকে আসা শতরান ও অর্ধশতকের প্রায় ৯০ ভাগ ইনিংসের স্ট্রাইকরেট ১০০+। সৌম্যর একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরির ইনিংস (১১৫.৪৫ স্ট্রাইকরেটে, ১১০ বলে ১২৭)। আর ছয় হাফ সেঞ্চুরির চারটিই ১০০ + স্ট্রাইকরেটে। বাকি দুটিও যথাক্রমে ৮৭.৯৩ আর ৯১.০৪ স্ট্রাইকরেটে।

কেউ কেউ ফোড়ন কাটেন, সৌম্য টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের প্রিয় পাত্র। আসলে ঐ বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট অনেক বেশি সাবলীল। তার ফ্রি স্ট্রোক খেলার সামর্থ্যও তামিম ছাড়া বাকিদের চেয়ে বেশি। ওপরের পরিসংখ্যান সে সত্যই জানান দিল। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে প্রথম ১০ ওভারের পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে দুই ওপেনারের কাছ থেকেই ফ্রি স্ট্রোক প্লে আশা করে দল।

কোচ ও অধিনায়ক সেটাই চান। ঠিক এই জায়গায় পিছিয়ে পড়েছেন বিজয়। দলের অবস্থা না ঠাউরে, ম্যাচ পরিস্থিতি মাথায় না এনে, নিজের মত খেলতে গিয়েই আসলে দল থেকে ছিটকে পড়া। না হয়, অমন দূরন্ত সূচনার পর কেউ আর এতদিন বাইরে থাকে? দেখা যাক, বিজয় এবার ঘরের মাঠে স্ট্রাইকরেটে উন্নতির পাশাপাশি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন কিনা!

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম