জাতীয়

হুমকি বিবেচনায় ইজতেমায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় র‌্যাব

এবার বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লি এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় হুমকি নেই। তবে সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান।

Advertisement

টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ঢাকার তুরাগ নদীর তীরে দু’দফায় এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান যোগ দেবেন। বিশ্ব ইজতেমায় জল, স্থল ও আকাশ পথে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে।

সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বোম ডিস্পোজাল এবং ডগ স্কোয়াড ইউনিট মোতায়েনের পাশাপাশি ইজতেমা মাঠে এবং মাঠের কয়েকটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, ১০টি ওয়াচ টাওয়ার এবং আড়াই শ’ সিসি টিভি স্থাপন করা হয়েছে। র‌্যাব পুরো ইজতেমা স্থলের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি’র মাধ্যমে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় এবং ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা হবে।

Advertisement

যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে র‌্যাব। র‌্যাবের একাধিক টিমকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তুরাগ নদীতে র‌্যাবের দুটি স্পিড বোট টহল দেবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হেলিকপ্টার ইজতেমা মাঠের আকাশে টহল দেবে।

বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে স্থল ও নদী পথে যেকোনো ধরনের অবৈধ প্রবেশ বন্ধে এবং ছিনতাই, পকেটমার ও অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির মতো অপরাধ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমার বিশাল জনসমাগমে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইজতেমা ময়দানে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্বে আড়াইশ চৌকশ র‌্যাব সদস্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন।

এছাড়া ইজতেমা মাঠ ও তৎসংলগ্ন এলাকাতে ২টি সেক্টরে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারির সুবিধার জন্য সমগ্র ইজতেমা মাঠ ঘিরে থাকবে র‌্যাবের ৯টি অবজারভেশন পোস্ট, থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক মোবাইল টহল। রাত্রিকালীন অবজারভেশন পোস্টগুলোতে নাইট ভিশন বাইনোকুলার ব্যবহার করা হবে।

Advertisement

ইজতেমা স্থলের অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে ও পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারীসহ, গাড়ি এবং মটরসাইকেলে ইজতেমা এলাকায় টহলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

তাছাড়াও ইজতেমা সংলগ্ন তুরাগ নদীতে সার্বক্ষণিক নৌ টহলের পাশাপাশি র‌্যাবের একটি চৌকষ দল হেলিকপ্টার যোগে ইজতেমা ময়দানকে ঘিরে আকাশপথে পর্যায়ক্রমে টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সব ধরনের চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা ময়দান ও এর আশেপাশে র‌্যাব সদস্যরা তৎপর থাকবে। পোশাকের সাথে সাদা পোশাকের র‌্যাব সদস্য থাকবেন। মুসল্লি সেজে ছদ্মবেশী র‌্যাব সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।

র‌্যাব এডিজি বলেন, র‌্যাব সদস্যরা অসুস্থ মুসুল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। যদি কোন মুসুল্লি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থাও থাকছে। মুসুল্লিদের চিকিৎসায় মেডিকেল সেন্টার খোলা হয়েছে। সেখানে ডাক্তারদের পরামর্শের পাশাপাশি থাকছে ফ্রি পর্যাপ্ত ওষুধের সুবিধা।

মাওলানা সাদের আসায় যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ইজতেমায় এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মাওলানা সাদ ইজেতমায় আসবেন না বলে জানতে পেরেছি।

উল্লেখ্য, বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম পর্ব শুরু হচ্ছে শুক্রবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে ইজতেমাকে সফল করতে সব প্রস্তুতিও শেষ। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পরপরই টঙ্গীর তুরাগ তীরে আসতে শুরু করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে জড়ো হতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। তীব্র শীত উপক্ষো করে তাবলীগ জামাতের বড় এই আয়োজনে শুক্রবার দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা এতে অংশ নেবেন। যানজট এড়াতে এরই মধ্যে বিশেষ উদ্যেগ নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে ইজতেমায় অংশ নেবেন ১৪ জেলার মুসল্লিরা।

জেইউ/এআরএস/আরআইপি