জাতীয়

ভারতীয় গরু আসা বন্ধে বেকার হয়েছেন ৪০ হাজার মানুষ

ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে সীমান্তের পশুহাট ও খাটালের উপর। ঈদকে সামনে রেখে সবাই যখন রোজগারের আশায় ব্যস্ত থাকেন তখন গরু আনা নেওয়ার রাখাল, গরু ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, পশুহাট ও খাটালের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় যুক্ত প্রায় ৪০ হাজার লোক বেকার হয়ে পড়েছেন।ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যশোর অঞ্চলের করিডোর দিয়ে গরু আসা গত পাঁচ মাসে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিজিবি কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এ রকম চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারত সীমান্ত দিয়ে গরু আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সীমান্তে বসবাস করা বেকার হওয়া মানুষের অন্তত ২০ শতাংশ ফেনসিডিল বা ইয়াবার মতো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়বেন। গরু আসা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়বে চামড়াশিল্পেও। দেশের চামড়া কারখানাগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে। এর সঙ্গে আমিষের ঘাটতি তো আছেই।বাংলাদেশে ভারতীয় গরুর সবচাইতে বড় ‘খাটাল’ যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোলের পুটখালি অবস্থিত। ভারত থেকে প্রতিদিন এই খাটালে গড়ে তিন হাজার গরু আসতো তবে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে শুণ্যের কোটায় বলে জানান খাটাল নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম।ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ২ ফেব্রুয়ারি পুটখালীর বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গের আংরাইল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে গরু পাচার বন্ধ করার জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রধান আশিস মিত্রকে নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই সীমান্তে কড়াকড়রি কারণে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়।যশোরের নাভারন পশু শুল্ক করিডোরের হিসেব মতে গেল বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন এ পাঁচ মাসে শুল্ক করিডোর করা হয়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৩২০টি পশু। অথচ চলতি বছরের একই সময় ওপার থেকে এসেছে মাত্র ১৯ হাজার ৭৯৭টি পশু। গেল বছরের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু এসেছিল ৫ লাখ ৯১ হাজার ৬শ ৮৫টি অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে গরু আসার সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৩শ ৮টি। আর বর্তমান সময়ে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯শ ৬০টি বলে জানিয়েছেন যশোরের নাভারন গবাদি পশু শুল্ক করিডোরের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুস সালাম। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশু হাট হচ্ছে শার্শার বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুহাট। এই হাটের ৯০ শতাংশ গরু ভারতীয়। সর্বোচ্চ আদালতে মামলা থাকায় হাটটির বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের। শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শরিফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, গতবছর প্রতি হাটে গড়ে পশু বেচাকেনা হতো ১৭ হাজার ৩শ ৮৪টি অথচ ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় এখন বেচাকেনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে গড়ে এক হাজার দুইশ তে। শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শরিফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, গরু আসা বন্ধ হয়ে গেলে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবেন। বন্ধ হয়ে যাবে সীমান্তের আশপাশে গড়ে ওঠা গরুর খাটাল ও হাটগুলো। সীমান্তে বসবাস করা বেকার হওয়া মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় তারা অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। শার্শা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, সরকার গো-মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দেড় দশক আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে করিডোর ব্যবস্থা চালু করে। ভারত থেকে এভাবে গরু আনতে যশোরের শার্শা সীমান্তে ৪টি করিডোর স্থাপন করা হয়। এ ব্যবস্থায় প্রথমে সীমান্তের ওপার থেকে আসা গরু একটি খোঁয়াড়ের মতো স্থানে জড়ো করা হয়। এরপর বিজিবি কর্মকর্তারা মালিকানাবিহীন দেখিয়ে গরুগুলোকে ‘বাজেয়াপ্ত’ ঘোষণা করেন। এরপর ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাজেয়াপ্ত’ গরু মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে গরু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে ভারতের কাছে এ ব্যবস্থার কোনো স্বীকৃতি নেই। খুলনা ২৩ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, যশোর সীমান্তের পুটখালী, অগ্রভুলোট, গোগা ও রুদ্রপুর করিড়োর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার গরু আসতো। এখন আসছে পঞ্চাশ থেকে একশটি।তিনি আরো বলেন, এত দিন সীমান্তের হাজার হাজার মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন তা বন্ধ হয়ে গেলে এর সঙ্গে জড়িত লোকজন বিকল্প পেশায় ঢোকার চেষ্টা করছেন। অনেকে চোরাচালানে জড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা করে তিনি বলেন, এতে করে ফেনসিডিলের মতো মাদকদ্রব্যের চোরাচালান বেড়ে যাবে। সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এজন্য খারাপ হতে পারে। মো. জামাল হোসেন/এমজেড/আরআইপি

Advertisement