বিনোদন

মিডিয়ার মানুষদের মধ্যে আন্তরিকতাটা কমে গেছে : ঐন্দ্রিলা

প্রয়াত চিত্রনায়ক বুলবুল আহমেদের যোগ্য উত্তরসূরী ঐন্দ্রিলা আহমেদ দীর্ঘ দশ বছরের বিরতি শেষে ফিরেছেন অভিনয়ে। নতুন প্রত্যাবর্তনের পর বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী। দেখছেন অনেক পরিবর্তন, মুখোমুখি হচ্ছেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার। জাগো নিউজের সঙ্গে শোবিজে নিজের অতীত, বর্তমান ও আগামীর প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলেন মিষ্টি হাসির ঐন্দ্রিলা। তাকে নিয়ে লিখেছেন ইমরুল নূর-

Advertisement

জাগো নিউজ : দীর্ঘ দশ বছর পর অভিনয়ে ফেরা। অনুভূতিটা কেমন?

ঐন্দ্রিলা : নিঃসন্দেহে দারুণ। আমার বড় হয়ে উঠাটা অভিনয়ের অাঙ্গিনাতেই। এটা আমার অনেক পছন্দের জায়গা। এতদিন পর এসে মনে হয়েছে আমি যেন আমার পরিবারেই ফিরেছি। সবাই আমাকে এমনভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন, আমি সত্যিই অভিভূত। আমার ফিরে আসায় সবার মধ্যে যে উচ্ছ্বাস, ভালোলাগা আমি দেখেছি, তা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। নতুন করে আবারও কাজে নিয়মিত হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

জাগো নিউজ : মাঝে বেশ লম্বা সময় বিরতি ছিলো আপনার। সেই সময়টা কিভাবে পার করেছেন?

Advertisement

ঐন্দ্রিলা : অভিনয় না করলেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ঠিকই জড়িত ছিলাম এই বিরতির সময়টুকুতে। নিজের পড়াশুনা, সংসার জীবন গুছিয়ে নিতেও একটু সময় লেগেছে। এগুলোর পাশাপাশি আমার বাবাকে নিয়ে ‘এক জীবন্ত কিংবদন্তির কথা’ নামে একটি ডকুমেন্টারি আর বাবার জীবনী নিয়ে ‘একজন মহানায়কের কথা’ শিরোনামে একটি বায়োগ্রাফি তৈরি করেছি। বাবাকে নিয়ে এই বায়োগ্রাফি লিখতে আমার তিন বছর সময় লেগেছে।

এছাড়াও একটা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন তৈরি করেছি যেটার নাম দিয়েছি ‘বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন’। বাবার সবগুলো জনপ্রিয় ছবির গানগুলো নিয়ে ব্লুবেরি হোটেলে একটি সংগীতানুষ্ঠানও করেছি। এ কাজগুলোর মাধ্যমে মনে হয়েছে আমি আমার বাবার সঙ্গেই আছি।

জাগো নিউজ : পড়াশোনার কথা বলছিলেন। সে ব্যাপারে জানতে চাই....

ঐন্দ্রিলা : আমি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। পাশাপাশি বাবার ইচ্ছে ছিলো ফিল্ম নিয়ে যেন পড়াশোনা করি আমি। তাই স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিষয়েও মাস্টার্স শেষ করেছি।

Advertisement

জাগো নিউজ : নতুন করে ফেরার পর নিশ্চয়ই অনেক কিছু নতুন লাগছে। দশ বছর সময় তো অনেক সময়। আগের সাথে এখনের কতটুকু পরিবর্তন দেখছেন?

ঐন্দ্রিলা : অনেক পরিবর্তন। কাজের মান ও ধরনে পরিবর্তন এসেছে। আর টেকনিক্যাল দিকগুলোতেও বেশ পরিবর্তন লক্ষনীয়। আরেকটা বিষয়, আগে যখন কাজ করতাম সবার মধ্যে একটা আন্তরিকতা ছিল। আমরা সব মিডিয়া পার্সনগুলো একটা পরিবার ছিলাম। কিন্তু এখন মিডিয়ার প্রত্যেকটা জায়গায় জায়গায় গ্রুপিং। আন্তরিকতার অভাবও দেখছি। সবাই একসঙ্গে থাকছে, হাসছে, গল্প করছে; কিন্তু আন্তরিকতার একটা গ্যাপ ফুটে উঠছে। এটুকু কষ্টের।

জাগো নিউজ : অভিনয়ে ফেরার পর ব্যস্ততা কেমন?

ঐন্দ্রিলা : ফেরার পর এরই মধ্যে তিনটি নাটকে কাজ করেছি। রুবেল হাসানের ‘বিলাভড’, মাবরুর রশীদ বান্নাহর ‘সাংসারিক ভালোবাসা’ এবং দীপু হাজরার ‘ফেইক লাভ’। প্রচুর কাজের অফার আসছে কিন্তু সবগুলো গ্রহণ করছি না। তাড়াহুড়া করতে চাই না। আমি অবশ্য এমনটা কখনোই করিনি। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে পারিও না। ফলে আমি আগের মতোই আস্তে ধীরে বেছে বেছে পছন্দসই কাজ করতে চাই। সামনেও বেশ কিছু কাজ রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোর কিছু কাজ এ মাসেই শুরু হবে।

জাগো নিউজ : এত লম্বা সময় বিরতির পরও নতুন করে নির্মাতাদের কাছে নিজের এই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আপনার ভাবনাটা কেমন?

ঐন্দ্রিলা : এটা আমার বাবার কারণেও বলা যায়। আবার আমার যদি যোগ্যতা না থাকতো তবে হয়তো এরকমটা হতোও না। দশ বছর ফিরে এসে এমন সাড়া পাওয়া তো অনেক বড় তারকাদের বেলাতেও দেখা যায় না। কিন্তু আমি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া। সেটা যেভাবেই হোক আমি উপভোগ করছি। ভালো অভিনয়ের তাগিদ বোধ করছি।

জাগো নিউজ : আপনার বাবা চলচ্চিত্রের মহানায়ক হিসেবে সমাদৃত। তার মেয়ে হিসেবে আপনার ইচ্ছে করে না চলচ্চিত্রে কাজ করতে?

ঐন্দ্রিলা : খুব করে। আমিও চাই চলচ্চিত্রে কাজ করতে। কিন্তু নিজের মনের মতো গল্প ও চরিত্র পেতে হবে। এখন গল্প প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে। এইসব ছবিতে কাজ করতে পারলে ভালোই হবে।

জাগো নিউজ : আগামীর প্রত্যাশা-

ঐন্দ্রিলা : ভালো কাজ করে যেতে চাই। বাবাকে নিয়ে বায়োগ্রাফি লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকটা চিত্রনাট্য ও তৈরি করে ফেলেছি যা দেখে ভালো লেগেছে বলে কয়েকজন নির্মাতা কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ভালো ভালো কাজ করার পাশাপাশি চিত্রনাট্য রচনাও চালিয়ে যাবো।

জাগো নিউজ : অনেকটা সময় আপনি শোবিজের সঙ্গে জড়িত। নতুন একটি বছরের শুরুতে যদি অতীতের হিসেবটুকু পেছন ফিরে দেখেন সেখানে প্রাপ্তিগুলো কী?

ঐন্দ্রিলা : আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করে আসছি। নাচও শিখেছি। যেহেতু আমার বাবা একজন চলচ্চিত্রের মানুষ ছিলেন তাই আমার বেড়ে উঠাটাও হয়েছে শোবিজের সঙ্গেই। এখানকার মানুষদের অনেক ভালোবাসা ও আন্তরিকতা পেয়েছি আমি। এটা আমার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি মনে হয়। আর কিছু বিষয়ে আমি বেশ অবাক হয়েছি। এতটা বিরতির পর ফিরে এসে পূর্ব কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ ‘সাঁকো টেলিফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ থেকে একটা সম্মাননা পেয়েছি। আমি সত্যিই মুগ্ধ।

আবার আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ করেছিলেন। বাবাকে নিয়ে বায়োগ্রাফি তৈরি করতে গিয়ে বুলবুল আহমেদের গবেষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে একটি ক্রেস্ট প্রদান করেছে। এটা আমার জন্য সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল, আমি এটাকে জীবনের বিরাট একটি প্রাপ্তি মনে করি। এরপর বাংলা একাডেমি থেকে তাদের হয়ে আমার বাবার আরেকটা বায়োগ্রাফি তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে আমাকে। এটি শেষ করতে পারলে নিজেকে আরও বেশি ধন্য মনে করবো।

আর অভিনয় জীবনে দর্শকের ভালোবাসা তো বিশেষ প্রাপ্তি হিসেবেই আছে। যা আমাকে রোজ রোজ ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা যোগায়।

এলএ/আইআই