দেশজুড়ে

পঞ্চগড়ে সকালে ২.৬, বিকেলে ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রা

‘এনুং জার জীবনে দেখুনাই। আগতো জার ছিল। কিন্তু কাইল থেকে মনে হচে, এইবার বুঝি বাচিবা নাহি। রাইতত নিন্দাবা পারু নাই। খুব ভোরে উঠে মাইয়া ছুয়া নিহেনে আগুনের গোরোত বসে আছি। এইঠে থেকে উঠিলেই শরীলডা কাঁপিবা ধরছে’।

Advertisement

পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার রিকশাভ্যানচালক মো. লিটন (৫৫) তীব্র শীতের অনুভূতি জানাতে এভাবেই কথাগুলো বলেন।

৫০ বছরের ইতিহাসে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়। কয়েকদিন ধরে টানা শৈত্যপ্রবাহে সর্বত্তোরের সীমান্ত উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এর আগে ১৯৬৮ সালে শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

গতকাল রোববার দিবাগত রাতে তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় একই অবস্থা ছিল। তিনদিন ধরে তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে এই শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রিকশাভ্যান চালক আর খেটে খাওয়া মানুষগুলো। দৈনন্দিন আয় কমে গেছে দিনমুজুর শ্রেণির মানুষের। হাসপাতালে বেড়ে গেছে সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়াসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বিরুপ প্রভাব পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রে।

Advertisement

কুয়াশার কারণে বিঘ্ন ঘটেছে যান চলাচলে। দিনের বেলাতেও যানবাহন চলাচল করছে হেড লাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশার কারণে সময়মতো দূর পাল্লার যানবাহন জেলায় পৌঁছায়নি। সব মিলিয়ে তীব্র শীতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের জনজীবন।

সোমবার দুপুরে জেলা শহরে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও তেঁতুলিয়া এবং এর আশপাশ এলাকার আবহাওয়া ছিল অপরিবর্তিত। সেখানে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল গোটা এলাকা। সঙ্গে উত্তর থেকে বেয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। তবে দুপুরের পর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সোমবার বিকেল ৩টায় জেলা শহরে সর্বোচ্চ ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রার কথা জানায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমরা সাধারণত রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সকাল ৯টায় রেকর্ড করি। রোববার রাতে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সকালে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় সাধারণত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেন, সোমবার বিকেল ৩টার দিকে জেলা শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন পর সোমবার দুপুরে সূর্যের মুখ দেখা গেছে। তবে রোববার রাতে ব্যাপক শীত ছিল। সকালে দেশের ইতিহাসে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় শীতার্ত মানুষদের মাঝে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রায় ৩০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া আরও ২০ হাজার শীতবস্ত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

সফিকুল আলম/এমএএস/আইআই