দেশজুড়ে

শিশু অয়নের শেষ পরিণতি কি মৃত্যু?

প্লে-থেকে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সেরা ছাত্রদের মধ্যে একজন রেহমান সুবহান অয়ন। স্কুলে উপস্থিতি, মেধা, ছবি আঁকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সে সবার চেয়ে এগিয়ে। এছাড়াও অনেক গুণের অধিকারী ৭ বছর বয়সী এই শিশু। আর এসব কারণেই স্কুলের সব ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা তাকে এক নামেই চেনে।

Advertisement

এতক্ষণ বর্ণনাকারী শিশুটি হলো সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকার ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি মো. আলমের ছেলে। রেহমান সুবহান অয়ন আম্বরখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে তার রোল নম্বর ১।

অয়ন গত ১৮ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের ২০৮ নম্বর ওয়াডের ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। ওই বিভাগের ডাক্তার লায়লা ইয়াসমিনের অধীনে চিকিৎসাধীন সে। ইতোমধ্যে তার বাবা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি মো. আলম সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করেছে ছেলের জন্য। একের পর এক হাসপাতালে ভর্তি, ডাক্তার বদল ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেই খরচ হয়েছে এসব টাকা। যেই ডাক্তারের কাছে ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানেই অসংখ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হচ্ছে এরপর রেফার্ড করে দেয়া হচ্ছে আরেক হাসপাতালে। সেখানেও একইভাবে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা। ওইসব করাতেই ইতোমধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছে অয়নের বাবা।

সন্তানের রোগের বর্ণনা দিয়ে মো. আলম জাগো নিউজকে বলেন, আড়াই বছর বয়সে প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু করে অয়নের। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ৪ দিন ভর্তি থাকার পর অয়নকে নেয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নেয়ার পর ডাক্তার জানালো অয়নের কিডনিতে পাথর হয়েছে। এ কারণে প্রসাব করার সময় রক্ত বের হয়েছে। এরপর ঢাকার ল্যাব এইডে ডাক্তার নজরুল ইসলামের কাছে অয়নকে নেয়া হলে তিনিও একই কথা বলেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের কিডনি বিভাগে দেখানো হয় অয়নকে। সেখানেও নতুন করে সব কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানান, অয়নের দুটি কিডনির চারপাশে প্রতিনিয়ত নতুন করে পাথর জন্মাচ্ছে। এসব পাথর প্রসাবের রাস্তায় চলে আসায় চাপ দিয়ে প্রসাব করার কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

Advertisement

অয়নের বাবা জানান, রক্তরক্ষণের পর ওষুধ প্রয়োগ করলে কিছুদিন সুস্থ থাকছে। এরপর আবারও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গতকাল রোববার অয়নকে নিয়ে বোর্ড মিটিং করেছে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা। এরপর আবারও ৬টি পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়েছে যার তিনটি করতে প্রায় ১২ হাজার টাকা লাগবে। বাকি তিনটি বাংলাদেশে হয় না। সেগুলো হয় ভারতে। অথচ বাংলাদেশে হওয়া পরীক্ষাগুলো করার টাকাও নেই আমার কাছে। এছাড়া প্রতিমাসে তাকে রক্ষ দিতে হচ্ছে। তার রক্ষের গ্রুপ বি নেগেটিভ। যা পাওয়া যায় না। ডাক্তার বলেছে তাকে সুস্থ করতে চাইলে দুটি কিডনিই বদলাতো হবে। কিন্তু কীভাবে সেটি সম্ভব?

তিনি বলেন, দীর্ঘ এই চিকিৎসাকালীন সময়ে ছেলের কোনো চিকিৎসায় হয়নি। হয়েছে শুধু পরীক্ষা নিরীক্ষা। তাতেই আমার সাড়ে ৫ লাখ টাকা শেষ হয়ে গেছে। সময় ক্ষেপণ না করে ছেলেটে এই টাকা দিয়ে ভারতে নিয়ে গেলে হয়তো সুস্থ হয়ে যেত অয়ন।

তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস এই চিকিৎসা সরকারের নির্দেশে হলে ডাক্তাররা আরও গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করতো অয়নের। এতদিন হয়তো সুস্থ হয়ে যেত ছেলেটি আমার। সরকারের কাছে অনুরোধ করে বলতে চাই, আমি আর আমার ছেলে চিকিৎসা করাতে পারছি না। দয়া করে আমার ছেলেকে বাঁচান।

অয়নের বিষয়ে আম্বরখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দিলরুবা জাগো নিউজকে বলেন, অয়ন স্কুলের সব শিক্ষকের প্রিয় ছাত্র। অসুস্থতার কারণে সে অনেক দিন থেকে স্কুলে আসতে পারছে না। এ কারণে সে নতুন বইও নিতে পারেনি। তার বইগুলো আমরা আলাদা করে রেখেছি। সে খুবই মেধাবী। কারও দিকে একবার তাকালে সে তার ছবি একে দিতে পারে। আমরা চাই সরকারিভাবে অয়নের চিকিৎসা হোক। সে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।

Advertisement

অয়নকে দেখতে সরাসরি যেতে পারেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের ২০৮ নম্বর বেডের ৭ নম্বর বেডে। অথবা তাকে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন তার বাবা মো. আলমের ০১৯১৫-৪৮৫৬৪৭ নম্বরে। সাহায্য পাঠাতে পারেন মো. আলম, অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব নম্বর : ০৫১৪০৭, আম্বরখানা শাখা সিলেট।

এমএএস/এমএস