প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যমুনা নদীর তীরবর্তী সিরাজগঞ্জ জেলায় নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি, কাশি শ্বাসকষ্ট ও ডায়ারিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। প্রতিদিন বেড়েই চলছে সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীদের ভিড়। কোথাও কোথাও সরকারি উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
Advertisement
এদিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ওলিপুর বাজারে প্রচণ্ড শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে ডাবলু সেখ (৩২) নামে এক ট্রলি শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কজনক অবস্থায় তাকে উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার সকালে তীব্র শীতে কাজে বের হতে পারছে না মানুষ। এছাড়াও বিকেল থেকেই তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় সন্ধ্যার পরপরই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার ও দোকানপাট। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। কাজে বের হতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।
তীব্র শীতের কারণে বিভিন্ন স্থানে রিকশা-ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে হাত গুটিয়ে চুপ চাপ বসে থাকতে দেখা গেছে। আবার অনেকে সারিবদ্ধ হয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাঁশ, কাঠ ও খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতে কাতর হয়ে অনেককে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডায় খেত-খামারেও কাজে যেতে পারছেন না খেটে খাওয়া দিনমজুর ও কৃষকরা। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
Advertisement
সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে শুয়ে থাকা ভিক্ষুক জোসনা, আয়েশা ও ছখিতন বেওয়া বলেন, আমরা স্টেশনে অনেক দিন হলো ভিক্ষা করি। আমরা বুড়ো মানুষ কাজ করতে পারি না। আইজ দুই দিন ওইলো কামে (ভিক্ষা) যাইতে পারছি না হিতের (শীত) লাইগ্যা। এই রহম হিত (শীত) থাকলে কি কইরা কামে যামু।
বয়োবৃদ্ধ রিকশা চালক সুজাবত আলী, আলহাজ্ব ও সোবাহান বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কামে আসি নাই। ভেবে ছিলাম রোদ উঠবে, কিন্তু রোদের কোনো দেখা নাই। সামনে আমার কিস্তি আছে। তাই গাড়ি নিয়া বাহির হইছি। কিন্তু তীব্র শীতে আর থাকতে পারছি না। বয়স হয়েছে তাই শীতে আর কাম করতে পারি না।
ফুটপাতের পুরাতন কাপড় বিক্রেতা মানব শেখ বলেন, দুইদিন হল শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কেনাবেচা খুব ভালো। গত দুই সপ্তাহের এ রকম বিক্রি করতে পারি নাই। বিগত ১০ বছরের তুলনায় এবারেই বেশি শীত পড়ছে। এ কারণে আমাদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আশা করি আরও ভালো হবে।
ট্রাকচালক আরমান আলী বলেন, প্রচণ্ড শীত তারপর আবার ঘন কুয়াশায় রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। সামনে থেকে কোনো খেয়াল করা যায় না। মাঝে মাঝে গাড়ি সাইড করে রাখতে হচ্ছে। এতো কুয়াশার মধ্যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তারপরও খাদ্য নিয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে।
Advertisement
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী জানান, প্রচণ্ড শীত আর ঘনকুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনগুলো দিনের বেলাতেও হেড লাইট ও কুয়াশা লাইট এবং এন্টিগেটর লাইট জ্বালিয়ে চলছে। ঘন কুয়াশার কারণে কোনো কোনো সময় রাস্তার দিক নির্ণয় করতে বিপাকে পড়ছে চালকরা।
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আকরামুজ্জামান জানান, তীব্র শীতে শিশুদের নিউমোনিয়া, ভাইরাল ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। গত কয়েকদিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি। এজন্য চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন তিনি।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/পিআর