বছরের পর বছর ধরে লোকসানে রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দিন যতই যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পাল্লা ততই ভারি হচ্ছে। ফলে কোনো লভ্যাংশই পাচ্ছেন না শেয়ারহোল্ডাররা।
Advertisement
এরপরও এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ায় প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এর দাম।
এ বিষয়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার প্রবণতা থামছে না। কিছুদিন পর পরই শেয়ারের মূল্যে উল্লম্ফন ঘটছে ‘জেড’ ক্যাটগিরিভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির।
সম্প্রতি শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় এর কারণ জানতে চেয়ে ৭ জানুয়ারি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। বরাবরের মতো এবারও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
Advertisement
তথ্য পর্যালোচনা দেখা গেছে, সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ারের দাম টানা বাড়ছে। ২৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১৮ টাকা ৬০ পয়সা, যা টানা বেড়ে ৭ জানুয়ারি ২৪ টাকা ৭০ পয়সাতে পৌঁছায়। অর্থাৎ মাত্র ছয় কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার বিনিয়োগকারীদের আবারও সতর্ক করেছে ডিএসই।
এর আগে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে গত বছর একাধিকবার কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। পরে তারা কোম্পানির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০১২ সাল থেকেই ঋণাত্মক রয়েছে। অর্থাৎ মুনাফা তো দূরের কথা বছরের পর বছর ধরে লোকসানে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ প্রদান করতে পারেনি।
Advertisement
ডিএসইর মাধ্যমে সর্বশেষ কোম্পানিটির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাব বছরের ২০১৭-১৮ প্রথম প্রান্তিকে (২০১৭ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। শেয়ার প্রতি লোকসানের পরিমাণ ২ টাকা ১৪ পয়সা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যা ২০১৬ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ছিল ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএসের তথ্য দেখা গেছে, ২০১২ সালে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৬ টাকা ৮৮ পয়সা। এরপর ২০১৩ সালে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা, ২০১৪ সালে ১ টাকা ৭৮ পয়সা, ২০১৫ সালে ২ টাকা ৯ পয়সা, ২০১৬ সালে ১ টাকা ৩৫ পয়সা এবং ২০১৭ সালে ৭ টাকা ২৭ পয়সা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
এমএএস/এমএমজেড/জেআইএম