জাতীয়

লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়, ভোগান্তি

স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো লাখো মানুষ। রাজধানীর বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। বুধবার সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়। পবিত্র শবে ক্বদর উপলক্ষে বুধবার সরকারি ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন ঘরমুখো দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চযাত্রী মানুষেরা। সরকারি ছুটি থাকায় সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ যাত্রীদের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। মূলত কাকডাকা ভোর থেকেই লঞ্চ যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে এখানে। দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীর তুলনায় লঞ্চ কম থাকায় হযবরল অবস্থা। দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ লঞ্চ সকালে ছেড়ে যাওয়ায় দুপুরের পর দেখা গেছে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষমাণ কিন্তু লঞ্চ নেই। ফলে আসন্ন ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ অঞ্চলের লাখ লাখ লঞ্চ যাত্রী।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেলায় লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। এবার ঈদ উপলক্ষে বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদর, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ছাড়াও জেলাগুলোর অন্যান্য উপজেলারও ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, চর কলমি ও মনপুরা। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া ঝালকাঠির নলছিটি। পটুয়াখালীর কলাপাড়া, খেপুপাড়া ও বরগুনার আমতলি। এসব এলাকায় যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত লঞ্চ চলাচল না করায় বিশেষ করে ঈদে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এবারও একই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চযাত্রী প্রায় ত্রিশ লাখ। সঠিক নিয়মে যাত্রী বহন করার কথা থাকলেও যে পরিমাণ লঞ্চ রয়েছে তাতে এর অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে লঞ্চ মালিক সমিতি অসাধু পন্থায় সিন্ডিকেট করে ঢাকা ঘাটে অর্ধেক সংখ্যক লঞ্চ বসিয়ে রেখে বরিশাল থেকে তিনটি এবং ঢাকা থেকে তিনটি করে লঞ্চ চালায়। রোটেশন প্রথার আওতায় বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে যে পরিমাণ কেবিন রয়েছে যাত্রীর সংখ্যা তার থেকে অনেকগুণ বেশি। ঈদে কেবিন যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আরো কয়েকগুণ। ফলে রোজার শুরু থেকেই টিকিটের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু হওয়ায় এখন আর কেউ টিকিট পাচ্ছে না।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর কর্মকর্তা শফিকুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ঈদে শুধুমাত্র দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চযাত্রী থাকে প্রায় ত্রিশ লাখ। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে লঞ্চ মালিকদের সহনশীল হওয়া উচিত। যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা পদক্ষেপ নেই। প্রত্যেক বছরের মত এবারও আমরা স্পেশাল ঈদ সার্ভিসের পরিকল্পনা করছি। সদরঘাট সূত্রে জানা যায়, সাধারণত বরিশাল-ঢাকা রুটে ১১টি লঞ্চ চলাচল করে। এগুলো হলো সুন্দরবন-৭ ও ৮, সুরভী ৭ ও ৮, পারাবাত ২, ৭, ৯, ১১, কীর্তনখোলা-১, দ্বীপরাজ-১, কালাম খান-১, টিপু-৪। এছাড়া সুন্দরবন-২ এবং এমভি টিপু ঝালকাঠী ঢাকা রুটে চলাচল করলেও বরিশাল ঘাটে যাত্রী ওঠানো নামানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বরিশাল সদর ছাড়া অন্যান্য রুটে যে সব লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম সম্পদ, বালিয়া, টিপু, সাগর, পাতারহাট-১, কালাম খান, কোকো, সোহেল, কর্ণফুলী, লালী, জাহিদ, নাজমা প্রমুখ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের জন্য জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকেই কেবিনের টিকেট ছাড়া শুরু হয়েছে। তা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন কেবিনের টিকিটি পাচ্ছে না বলে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন। এদিকে কোনো কেবিনে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে তার জন্য প্রতি কেবিনের ভাড়াও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লঞ্চ অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সদরঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদে লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত ট্রিপ দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ঐ ট্রিপের সব টিকেট রয়েছে লঞ্চের কেরানি, বুকিং কাউন্টারের বুকিং ক্লার্ক, লঞ্চ ম্যানেজার, সুপার ভাইজার ও দালালদের দখলে। এক্ষেত্রে দালালদের ওপর দোষারোপ করা হলেও অভিযোগ আছে- তাদের ব্যাবহার করছেন খোদ অসাধু কিছু লঞ্চ মালিক।লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার নেতা ও লঞ্চ মালিক মো. সাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, অধিকাংশ লঞ্চ অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে এটা ঠিক না। আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করছি। ঈদে ঝুঁকিপূণ লঞ্চ যাতে চলাচল করতে না পারে সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আশাকরি তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।আরএম/এসএইচএস/পিআর

Advertisement