দেশজুড়ে

সা‌বেক এক এম‌পির মান‌বেতর জীবনযাপন

২০০৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অবশ হয়ে পড়ে শরীরের একাংশ। এরপরই বাসা বাঁধে নানা রোগব্যাধি। পায়েও ধরেছে পচন। নিদারুণ কষ্টে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন প্রায় ১০টি বছর। অর্থ ও চিকিৎসার অভাবে বর্তমানে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাঙ্গুনিয়া-৭ আসনের সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ ইউসূফ। জীবন বাজি রেখে একাত্তরে যুদ্ধে করেছিলেন, জনগণের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। নীতি ও আদর্শেও সদা অবিচল তিনি। ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাকা চৌধুরীর ভাই এনডিপি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। একসময়ে কমিউনিস্ট পার্টি ও পরে আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক সাংসদ অকৃতদার ইউসুফের এ করুণ কাহিনী যে কারো হৃদয়কে নাড়া দেবে।

Advertisement

নির্লোভ নির্মোহ মোহাম্মদ ইউসূফের নিজের বলে কিছু নেই। দলের নেতা ও সাংসদ হয়েও গড়েননি কোনো বাড়ি-গাড়ি। দেশের কোথাও নেই একখণ্ড জমি। এমনকি নেই কোনো ব্যাংক-ব্যালেন্স। পৈতৃক সূত্রে যেটুকু পেয়েছিলেন তাও দান করে দিয়েছেন। বর্তমানে এক জরাজীর্ণ কুড়ে ঘরেই তার বসবাস।

জানা যায়, ১৯৫১ সালে রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ মহান ব্যক্তি। বাবা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ছিলেন কৃষক ও মা মাসুমা বেগম গৃহিণী। মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন রাঙ্গুনিয়া কলেজে। ঘরের মায়া ছেড়ে ওঠেন কলেজ ছাত্রাবাসে। আর সেখানেই শুরু রাজনীতির হাতেখড়ি। যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। অল্প দিনেই কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৭৩ সালে স্নাতক শেষ করে কর্ণফুলী পাটকলে নেন কেরানীর চাকরি। আর তখন থেকেই শুরু কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে পথচলা। এর হাল ধরে ১৯৯১ সালে আট দলীয় জোটের হয়ে রাঙ্গুনিয়া-৭ আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাত্তর পরবর্তী তিনিই প্রথমবার প্রভাবশালী ফজলুল কাদের চৌধুরীর পরিবারকে পরাজিত করেন।

Advertisement

ব্যক্তিজীবনে অন্যায় ও লোভের কাছে কখনো নীতিচ্যুত হননি সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ ইউসূফ। বিএনপিতে যোগ দেয়ার কোটি টাকার লোভও তাকে তার আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ছুটে বেড়িয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার পথে প্রান্তরে। দল ও জনগণের জন্য নিজেকে নিবেদিত করলেও সংসার ধর্ম করা হয়ে উঠেনি তার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসূফের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বাদশার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবার প্রথম পরিবারের সন্তান তিনি। সেখানে আপন বলতে কেউ নেই তার। তবে অসুস্থতার পর থেকে সৎ ভাইদের কাছেই রয়েছেন। তাদের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। তবুও সাধ্যমত সেবা করছেন তারা।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাহ জাগো নিউজকে বলেন, এমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাই রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে প্রশাসন থেকে এখনো পর্যন্ত তার ব্যাপারে কোনো খবর নেয়া হয়নি।

তবে নানা সময়ে অনেকেই বর্ষীয়ান এ আওয়ামী নেতা ও সাবেক সাংসদের খোঁজ খবর নিলেও, উন্নত চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। নিজ দলের সরকারের কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি। বরং বিনা চিকিৎসায় ক্রমশ মৃত্যুর পথেই প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ।

Advertisement

এফএ/এমএস