শিক্ষা

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত

গত ছয়দিন ধরে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। জানা গেছে, গত ৩৩ বছর ধরে পাঁচ হাজার ৪৭৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতা বঞ্চিত। কিছু মাদরাসার শিক্ষক মাসিক বেতন-ভাতা পেলেও তা খুবই সামান্য।

Advertisement

গত বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে হস্থান্তর করায় সে প্রক্রিয়াটিও থমকে গেছে। বাধ্য হয়ে জাতীয়করণের দাবিতে গত রোববার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাতেও সাড়া না মেলায় হতাশ হয়ে পড়ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষক শাহজাহান। তিনি বলেন, লেখাপড়া শিখে শিক্ষকতার মহান পেশায় এসেছি। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবারের খরচ চালাতে পারছি না। মানবেতর জীবন-যাপন করছি। রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করতে হবে।

শিক্ষকরা বলেন, তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তায় বসে আন্দোলন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস মেলেনি। অথচ আমাদের পাশেই আন্দোলন করছিলেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী এসে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আমরাও একই দেশের নাগরিক। তাদের মতোই শিক্ষক। কিন্তু আমাদের দিকে কারও কোনো দৃষ্টি নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি যোগাযোগও করেননি।

Advertisement

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ কারী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, ৩৩ বছর ধরে আমরা অভিভাবকহীন ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে স্মরকলিপি দেয়ার পর ২০১৬ সালের ১৮ মে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া হয়। মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে সরকারিকরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। সরকারি করতে মন্ত্রী একটি ওয়ার্কিং কমিটিও গঠন করে দেন। আমরা খুশিতে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের কিছু না জানিয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা হস্থান্তর করা হয়। এটা ষড়যন্ত্র। প্রাথমিক শিক্ষা আইনের পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, রোববার বেলা ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের নবনিযযুক্ত প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেব আমরা। আমরা যে কোনো মূল্যে জাতীয়করণ চাই। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি জরুরি একটি মিটিংয়ে আছি। এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষা শুরু হয়। প্রথমে বিনা বেতনে মাদরাসার কার্যক্রম চালু করা হয়। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ৬৯৯৮টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মাদরাসার সংখ্যা ১৫১৯টি। এসব মাদরাসায় ৫১ হাজার ৯৯৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষক নেতাদের দাবি, এর বাইরেও আরও অনেক মাদরাসা রয়েছে। যেসব মাদরাসার কোড ও ইআইআইএন নম্বর নেই।

Advertisement

শিক্ষকরা জানান, ১৯৮৪ সালে ৭৮ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে স্বতন্ত্র মাদরাসা নিবন্ধন শুরু হয়। তখন থেকেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা সরকারের নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছেন। একই কারিকুলামে পাঠদান করা হয়। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় এসব মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতোই সরকারের সব কাজে অংশ নেন তারা।

এমএইচএম/বিএ/পিআর