অস্ত্র নয়, শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একমাত্র শান্তিই পারে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে। বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪ টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশিক উদ্যাগের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গাজায় যা ঘটেছে তা বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত করেছে। তাই বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার আহবানও জানান।জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অন্যান্য দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া সংবর্ধনা ও মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকালে ভাষণ দেন শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশি¡ক উদ্যাগের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায়। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শিক্ষা খাতে তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে পৃথিবী চাই তা গড়তে হলে, সমরাস্ত্র তৈরিতে যে শত কোটি টাকা ব্যয় করছি, তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।তিনি বলেন, সবার জন্য শিক্ষা ও লিঙ্গ সমতা আনার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য আমাদের সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালের পর আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে ‘মানসম্মত শিক্ষা।শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১২ কোটি তরুণ ও কর্মঠ জনশক্তি তৈরি হবে। তাদের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্য নিয়েই ২০১০ সালে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।স্বল্প আয়ের দেশে মানসম্মত শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই ও আধুনিক শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শুধু ২০১৪ সালেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩১ কোটি ৮০ লাখ পুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। একটি নতুন শিক্ষা পাঠ্যক্রম এবং সৃজনশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাতে মূলধারার বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে আধুনিয়ান করা হয়েছে।সে কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একটি প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ গঠনে শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তিগত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।মানসম্মত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি বলেন, সে জন্য সরকার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। তাছাড়াও নবীন শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সে কারণেই ২০১৩ সালে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত এক কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী। নানা উদ্যোগের ফলে গত পাঁচ বছরে দক্ষতাভিত্তিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ গুণ বেড়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, “নারী শিক্ষা গুণগত শিক্ষার অন্যতম একটি স্তম্ভ। গুণগত শিক্ষার জন্য যথাযথ উপকরণ প্রয়োজন। চলতি বছরের বাজেটে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।তার আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অন্য সব সরকার প্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন, যোগ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনের দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজে।শনিবার সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর ফাঁকে তিনি আরো কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকও করবেন।
Advertisement