দেশজুড়ে

ঠাণ্ডার তানে কাম কোরিবা পারুনা

‘মুই রাজমিস্ত্রির যোগালির (হেলপার) কাম করু। দু’দিন হইল ঠাণ্ডার তানে (জন্য) কোনহো কাম কোরিবা পারুনা। হাতলা (হাত দুটো) অবস হয় যাছে। বাড়িত খাবারো নাই। কম্বল একটা পাইছু, কিন্তু কাম কোরিবা না পাইল্লে মাইয়া ছুয়া (স্ত্রী-সন্তান) নেহেনে (নিয়ে) খামো কি।’

Advertisement

শনিবার সকালে পঞ্চগড় জেলা শহরের তেঁতুলিয়া রোড এলাকায় শীতের কথা জিজ্ঞেস করায় এসব কথা বলেন, রাজমিস্ত্রির সহকারী রওশন আলী (৫৫)। তার বাড়ি বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে। রওশন আলী আরও বলেন, এলা হামাক আর কম্বল লাগিবা নাহে, হামাক টাকা পাইসা দিহেনে সাহাইয্য কইল্লে ভালো হয়।

একই ধরনের কথা বললেন, জেলা শহরের সদর ইউনিয়নের লাঠুয়াপাড়া ডাংগুয়া মার্কেটের ভ্যানচালক জয়নাল আবেদীন (৪৮)। তিনি বলেন, হঠাতে খুব জার (ঠাণ্ডা) পইল (পড়ল)। লোকলা ভ্যানত উঠিবা চাহেনা। আগত পত্তিদিন ৩/৪শ টাকা ইনকাম কইচ্ছুনু। কাইল সারা দিনত মাত্র ৫০ টাকা হইছে। আইজকা দিপহর (দুপুর) পজ্জন্ত একটা টাকাও ভাড়া মারিবা পারু নাই। এংগ চইললে হামরাতো না খাহেনে মরিমো।

পঞ্চগড়ে দু’দিন ধরে টানা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতে কুয়াশা ঝড়ছে বৃষ্টির মতো। দিনভর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছেন মানুষজন। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন রওশন আলী আর জয়নাল আবেদীনের মতো খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

Advertisement

গতকাল শুক্রবার সকালে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সর্বনিম্ন তাপমাত্র ৯.৪ রেকর্ড করেছে। তবে জেলা শহরে শীতের তীব্রতা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষজনকে খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

অবস্থানগত কারণেই হিমালয় কন্যা খ্যাত সর্বত্তোরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে বরাবরই শীতের প্রকোপ বেশি। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে এখানে দু’দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ এর মধ্যেই উঠানামা করছে। তিন দিন ধরে ঠিকমতো সূর্যের দেখা নেই। দিনরাত শিরশির করে বয়ে চলা ঠাণ্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। দিনে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন। রাত ৮টার পরেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে লোকালয়। শীতের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না ছিন্নমুল মানুষ। সকাল হতে না হতেই তাদের খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

শনিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল গোটা এলাকা।

শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের মোটরসাইকেল মেকার মো. আলম বলেন, আমি মোটরবাইকেল মেরামতের কাজ করি। কিন্তু ঠাণ্ডার কারণে হাত পা অবস হয়ে আছে। হাত দিয়ে লোহা জাতীয় কোনো কিছু ধরলে ঠাণ্ডা আরও বেড়ে যায়। কোনো কাজ করতে পারি না।

Advertisement

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দু’দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা এলাকার দুস্থ ও শীতার্তদের মধ্যে সরকারি বেসরকারিভাবে কম্বলসহ শীতবস্ত্র প্রদান করা হচ্ছে। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবেও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। তবে তীব্র ঠাণ্ডার কারণে দিনমজুর শ্রেণির অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের শীতবস্ত্রের পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য করা প্রয়োজন।

সফিকুল আলম/এমএএস/জেআইএম