কনকনে শীত উপেক্ষা করে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢলে জমে উঠেছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। গতকাল ছুটির দিন থাকায় সকল থেকে মেলায় ছুটে আসেন রাজধানীবাসী। জুমার নামাজের পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। এদিন বিকিকিনিও বেশ, খুশি বিক্রেতারাও।
Advertisement
গতকাল দর্শনার্থীদের জন্য মেলার গেট খুলে দেয়া হয় সকল ১০টায়। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে থাকেন দর্শনার্থীরা। দুপুর ১২টার মধ্যে প্রায় ভরে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। জুমার নামাজের পর নেমে আসে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে তিল ধরার জায়গা ছিল না। প্রথম ছুটির দিনে জনসমুদ্রে পরিণত হয় বাণিজ্য মেলা।
ছুটির দিন হওয়ায় অফিস ও কাজের চাপ না থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আসেন মেলায়। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাও দলবেঁধে মেলায় চলে আসেন। নানা বয়সী আর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। ক্রেতাদের ভিড়ে হিমশিম খেতে হয় প্যাভিলিয়ন ও স্টলে দায়িত্বরতদের।
Advertisement
গত দুদিন ধরে সারাদেশের পাশাপাশি রাজধানীতেও দেখা দিয়েছে কনকনে শীত। সে শীত উপেক্ষা করে সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে বাণিজ্য মেলায় হাজির সবাই।
মেলায় শীতের পোশাকের দোকানে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। পাশাপাশি গৃহস্থালী এবং শিশু-কিশোর ও নারীদের পণ্যসামগ্রীর স্টলগুলোতেও ছিল প্রচণ্ড ভিড়। ইলেকট্রনিক্স পণ্য, রান্নার সামগ্রী ও প্লাস্টিকের দোকানগুলোতেও এদিন চোখে পড়ার মতো ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে।
ব্লেজার বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফিট এলিগ্যান্সের সামনে গিয়ে দেখা যায়, স্টলটির ভেতরে পা ফেলার জায়গা নেই। ছোট আকারের স্টলটির দায়িত্বে থাকা বিক্রয় কর্মীরা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
স্টলটির বিক্রয়কর্মী মো. ইব্রাহিম বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় হবে- এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। ১১টার পর থেকে ভিড় লেগে আছে। আমাদের দোম ফেলার সময় নেই।
Advertisement
মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রামপুরার বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, বাণিজ্য মেলার শুরুর দিন থেকে বাচ্চারা এবং তাদের মা এখানে ঘুরতে আসার আবদার করে। ওদের আবদার পূরণে মেলায় আসা। তবে আজ কেনাকাটার খুব একটা ইচ্ছা নেই। ঘুর ঘুরে দেখাই আজ মূল উদ্দেশ্য। মেলার শেষের দিকে কেনাকাটা করার ইচ্ছা আছে।
মিরপুর থেকে ছেলে-মেয়ে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন শিক্ষীকা জাহানারা বেগম। বলেন, ছুটির দিন থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় এসেছি। ছোট বাচ্চার খেলনা ও একটি ড্রেস কিনেছি। বড় ছেলের জন্য কিনেছি একটি জিন্সের প্যান্ট। আর বাসার জন্য একটি রাইস কুকার ও কিছু প্লাস্টিকের সামগ্রী আর কিছু বিস্কুট কিনেছি।
মেলায় সাত বন্ধুর সঙ্গে দলবেঁধে ঘুরতে এসেছেন ধানমন্ডির কলেজ শিক্ষার্থী রোমেল। তিনি বলেন, আজ ছুটির দিন। কলেজ বন্ধ, নেই কোচিংয়ের ঝামেলাও। এ কারণে বন্ধুরা মিলে মেলায় ঘুরতে এসেছি। কোনো কিছু কেনার উদ্দেশ্য নেই। মেলার মাঠ ও বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখবো। যতক্ষণ ভালো লাগে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেবো, আনন্দ করবো।
ছুটির দিনে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা-দর্শনার্থী পাওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও। গৃহস্থালীসামগ্রী বিক্রেতা মো. ইয়ানুর রহমান বলন, বাণিজ্য মেলায় শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ভিড় বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে। সকালের দিকে ভিড় কিছুটা কম ছিল। কিন্তু নামাজের পর দেখতে দেখতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। সকালের দিকে বোঝা যায়নি এতো ভিড় হবে।
শিশু খেলানা ও মহিলাদের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করেন আজগর আলী। বলেন, মেলার সৌন্দর্যই হলো ক্রেতা-দর্শনার্থী। তাদের আগমন যত বাড়বে মেলার সৌন্দর্য তত বাড়বে। ছুটির দিন থাকায় অনেকে পরিবারসহ মেলায় এসেছেন। গত চারদিনে যা বিক্রি হয়েছে আজ একদিনেই তার তিনগুণ বিক্রি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, সামনে ক্রেতা-দর্শনার্থী আরো বাড়বে।
এমএএস/এমএআর/এসএম