দেশজুড়ে

শষ্যভাণ্ডার নওগাঁয় বোরো বীজের সংকট

উত্তরাঞ্চলের শষ্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলা। এখানে উৎপাদিত ধান জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় অন্যান্য জেলায়। আর ধান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ভালো বীজ। কৃষকদের অভিযোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে এবছর বোরো আবাদের জন্য চাহিদানুযায়ী বীজ সরবরাহ করা হয়নি। ফলে বিভিন্ন কোম্পানি ও খোলাবাজার থেকে উচ্চ মূল্যে বীজ কিনতে হচ্ছে কৃষকদের।

Advertisement

কিন্তু নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক এ কথা অস্বীকার করে বলেন, বোরো আবাদের জন্য বীজ যথেষ্ট সরবরাহ করা হয়েছে। জেলার বাইরে থেকে ধানের চারা নিয়ে আসার প্রয়োজন হয় না। কারণ কৃষকরা নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করে এবং চারা তৈরি করে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি এবং বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও ধান বীজ সরবরাহ করে থাকে। ফলে বীজ সংকট হওয়ার কথা না।

এদিকে বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ি ইউনিয়নের জোলাপাড়া গ্রামের কৃষক তৌহিদ হাসান টনি বলেন, এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করার জন্য কোম্পানির নাজিরশিট ২ কেজি ওজনের প্যাকেট ১৭০ টাকা মূল্যে ৫ প্যাকেট ধান বীজ কিনেছেন। বিএডিসির বীজের চাহিদা বেশি হওয়ায় তিনি কোনো বীজ পাননি। বিএডিসির বীজ উন্নত এবং দামও কিছুটা কম। আর খোলা বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বীজ বিভিন্ন দাম। কিন্তু বিএডিসির উন্নত বীজ থেকে ভালো ফলন হয় এবং কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক।

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া বাজারের মেসার্স বৃষ্টি ট্রেডার্স প্রো. শাহজাহান সেলিম বলেন, গত বছর বিএডিসি থেকে ২০ বস্তা (২০০ কেজি) ধান বীজ নিয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর বীজ না পাওয়ায় বাড়ির উৎপাদিত জিরাশাইল ধান বীজ বিক্রি করছি। এছাড়া এসিআই ও হাইটেক কোম্পানির বীজ বিক্রি করছি।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন। এর জন্য বীজের চাহিদা ৬ হাজার ২২ মেট্রিক টন। প্রণোদনা দেয়া হয় সার ডিএপি ২৯৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন ও এমওপি ১৫১ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন এবং পুনর্বাসন করা হয় ডিএপি ৪১৬ মেট্রিক টন ও এমওপি ২০৮ মেট্রিক টন। উন্নত জাতের উপশি ধান বীজ পুনর্বাসন করা হয় ৫০ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা যায়, বোরো আবাদে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বীজের চাহিদা ৬ হাজার ২২ মেট্রিক টন হলেও বরাদ্দ পাওয়া যায় ১২১ মেট্রিক টন। অতিরিক্ত আরো নিয়ে আসা হয় ৪৭ মেট্রিক টন। এছাড়া প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৫০ মেট্রিক টন। জেলায় বীজ সরবরাহকারী ডিলার রয়েছে ২২৩ জন। প্রতি বস্তা ১০ কেজি ওজনের দাম ডিলার পর্যায়ে ৪৩০ টাকা। কৃষক পর্যায়ে ৫০০ টাকা। উন্নত জাত ধান বীজ ব্রি-২৮, ২৯, ৫০, ৫৩, এসএলএইচ সরবরাহ করা হয়।

নওগাঁ বীজ বিপণন সিনিয়র সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বীজের সংকট নেই। যথেষ্ট সরবরাহ আছে। সরকার, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সরবরাহ থাকায় এবং কৃষকরা নিজেরাই বীজ উৎপাদন করাই কোনো ঘাটতি নেই।

আব্বাস আলী/এফএ/পিআর

Advertisement