শিক্ষা

ঢাকার ২শ পদে ২০ হাজার বদলির আবেদন প্রাথমিকে

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন প্রাথমিক স্কুলে দুই শতাধিক শূন্য আসনে প্রায় ২০ হাজার বদলির আবেদন এসেছে। সহকারী শিক্ষকদের আবেদনের সঙ্গে রয়েছে উপর মহলের তদবিরও। ফলে কাকে বাদ দিয়ে কাকে ঢাকায় বদলি করবে তা নিয়ে বিপাকে রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে প্রায় তিন লাখ সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। সকল শিক্ষকেরই স্বপ্ন থাকে ঢাকায় বদলি হওয়ার। এ কারণে তারা উপর মহলের নীতি-নির্ধারকদের ধরে নানাভাবে বদলি তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের ভাগ্য ভালো তারাই স্বপ্নের ঢাকায় বদলির সুযোগ পাচ্ছেন।

তারা জানান, ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে বদলি হতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রায় ২০ হাজার আবেদন জমা রয়েছে। চলতি মাস থেকে আবারও বদলির আবেদন শুরু হয়েছে। মার্চ মাসে এ আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হবে। এসব বদলি আবেদনের অধিকাংশই ঢাকায় বদলির জন্য। অথচ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মাত্র ২ শতাধিক সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।

জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে বদলি বিধিমালা সংশোধনের কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা যোগ্যতা পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হলেই ঢাকায় সুবিধা মতো স্থানে বদলি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজধানীর সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে বদলির ক্ষেত্রে এমন বিধি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বদলির আবেদন করা যাবে না। তবে বিশেষ কারণে যেকোনো সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক, প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপ-পরিচালকের সুপারিশে সুবিধা মতো স্থানে বদলি হওয়া যাবে।

সরকারি প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বদলির নীতিমালা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে স্কুলশিক্ষকদের যৌক্তিক কারণে বা প্রয়োজনে বদলি করা সম্ভব হয় না। চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা থাকতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সুবিধা মতো স্থানে বদলি হওয়া যায় না। প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরের স্কুলে যোগদান করতে হচ্ছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বদলি নীতিমালা সংশোধনের কাজ শুরু করে।

খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর মধ্যে সিটিকর্পোরেশন এলাকায় বদলির ক্ষেত্রে মেধা পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই শুধু এসব স্থানে বদলি হতে পারবেন। চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষকদের বিয়ে হলে স্বামীর কর্মস্থলের পার্শ্ববর্তী স্কুলে বদলি হতে পারবেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের স্থায়ী ঠিকানার পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুলে বদলি করা যাবে, স্বামী মারা গেলে বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সুবিধা মতো স্থানসহ বিশেষ কোনো কারণে বছরের যেকোনো সময় বদলি হওয়া যাবে, দুর্গম এলাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চাকরির মেয়াদ ১০ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর পর নিজ এলাকায় বদলি হতে পারবেন, জাতীয়করণ অনেক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা প্রেষণে নিজ জেলায় বদলি হতে পারবেন। তবে সাধারণ বদলির ক্ষেত্রে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আবেদনের সময় নির্ধারিত রয়েছে।

বদলি নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক বদলি নীতিমালায় কিছু জটিলতা থাকার কারণে অনেক শিক্ষকের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। সকলে ঢাকায় বদলি হতে চান। এ কারণে ঢাকার বদলিতে প্রায় ২০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। অথচ রাজধানীর সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোতে মাত্র ২০০টি পদ খালি রয়েছে। তাই একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে বদলি করা জটিল হয়ে পড়েছে।

Advertisement

তিনি বলেন, অনেকে আবার চাকরি ছেড়ে দেন বা ঝুঁকি নিয়েই চাকরিতে থাকছেন। অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার ঢাকায় বদলি হয়ে আসতে চান। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে বদলির সুযোগ মেধাবী শিক্ষকদের দেয়া হবে। সেই আলোকে আমরা বদলির নীতিমালা পরিবর্তনের কাজ করছি। এখন থেকে বিশেষ কারণে বছরের যেকোনো সময় শিক্ষকরা বদলির আবেদন করতে পারবেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে তাকে বদলি করা হবে। খসড়া তৈরি হয়েছে। সবার মতামত চাওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

এমএইচএম/এনএফ/আইআই