সকালে দুই বছরের ছোট্ট ছেলে অর্তিককে আদর করেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন মিঠুন চাকমা প্রকাশ জুম্মা। কথা ছিল আদালত থেকে বাড়ি ফিরে বিকেলটা আদরের সন্তানের সঙ্গে কাটাবেন।
Advertisement
কারণ বুধবার (৩ জানুয়ারি) ছিল মিঠুন-রিনা দম্পতির দুই বছরের অর্তিকের জন্মদিন। মিঠুন চাকমা ঘরে ফিরেছেন তবে লাশ হয়ে। কিন্তু কে জানতো প্রতি পক্ষের বুলেট কেড়ে নেবে তার তাজা প্রাণ।
সকালের যাওয়াই হবে জীবনের শেষ যাওয়া। ছেলের জন্মদিনের আনন্দ আয়োজন রূপ নেবে বিষাদে। অর্তিক হারাবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় নির্ভরতাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগদান না করে জুম্মজাতির অধিকার আদায়ে আঞ্চলিক রাজনীতিতে যুক্ত হন এক সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মিঠুন চাকমা।
Advertisement
রাজনীতি করতে এসেই হিল উইমেন ফেডারেশনের এক সময়ের নেত্রী রিনা দেওয়ানের সঙ্গে সংসার পাতেন। দুই বছর আগে তাদের সংসার আলো করে আসে ছেলে অর্তিক। একমাত্র ছেলে অর্তিককে ঘিরেই তাদের পৃথিবী।
মিঠুন চাকমার চলে যাওয়ার শোকে মুহ্যমান সদ্য বিধবা রিনা দেওয়ান। শোক স্পর্শ করেছে মিঠুনের পরিবার আর আত্মীয়-স্বজনদেরও। দুই বছরের শিশু অর্তিক হয়তো এখনও বুঝে ওঠতে পারেনি তার বাবা আর ফিরবেন না। জমকালো আয়োজনে পালিত হবে না তার জন্মদিন।
মিঠুন চাকমার চাচা বৈরি মিত্র চাকমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এমনটা তো আমরা ভাবিনি। কেন তাকে লাশ হতে হলো এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ছেলের জন্মদিনের সব আয়োজন ছিল। কিন্তু সব শেষ। একদল সন্ত্রাসী তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েই ছুটে যায় তার ছোট ভাই বাকিশ চাকমা। কিন্তু ততক্ষণে রাস্তায় পড়েছিল বড় ভাই মিঠুনের নিথর দেহ। বড় ভাই মিঠুন চাকমার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন ছোট ভাই বাকিশ চাকমা।
প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ (প্রসীত বিকাশ খীসা) অংশের অন্যতম সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র মিঠুন চাকমা প্রকাশ জুম্মা বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার তলপেটে ও মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে তাকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
Advertisement
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এএম/পিআর