আগে ইন্ডাস্ট্রি ও জনগণের পক্ষ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া পেশ ও আদায় করার দায়িত্ব পালন করতেন জানিয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘নেত্রী এখন আমাকে উল্টো জায়গায় বসিয়ে দিয়েছেন।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি সভায় মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-এর (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার। বুধবার তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তারানা হালিমকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ হিসেবে দেয়া হয়েছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আগে আমি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে জনগণের পক্ষ থেকে কথাগুলো বলতাম। সচিব, বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যারা এর সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। তখন কথা বলার সুরটা ছিল দাবি-দাওয়া পেশ করা ও দাবি-দাওয়া আদায় করার।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘নেত্রী এখন আমাকে উল্টো জায়গায় বসিয়ে দিয়েছেন। টেবিলের এইদিক থেকে ওইদিকে বসিয়ে দিয়েছেন। আমি যেসব কথা আগে বলেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করব কি না এটাই আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
‘আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সেটি হচ্ছে এই মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ হচ্ছে আমার দুটি পা বা দুটি হাত বা দুটি চোখ। সেইভাবে আমরা যেন এটাকে দেখি। একে অপরের পরিপূরক। একটি আরেকটির সঙ্গে সহযোগিতা করে দুটি বিভাগ পরিচালিত হবে।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান যে জায়গায় যে অবস্থায় আছে, এর দুর্বল জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করা, সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে ও সেগুলো দূর করা।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আজ আমি এই মন্ত্রণালয়ে ছাত্র হিসেবে এসেছি। আমার উদ্দেশ্য এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড এবং এর যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মনে করিয়ে দিতে চাই- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশকে ডিজিটাল রূপান্তরে বড় ভূমিকা পালন করছে এই মন্ত্রণালয়।’
‘আমি এক বছর সময় গুনছি, তাই শেখার জন্য বেশি সময় দেয়া যাবে না। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমি বোধহয় শিখে যাব। আমি ছাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ না, প্রাইমারিতে সবসময় ফার্স্ট হইতাম।’
এই যুগে গাড়ি চলার সড়ক নির্মাণের চেয়ে ইন্টারনেট চলার মতো মহাসড়ক তৈরি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জব্বার বলেন, ‘আগামী দিনে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই মন্ত্রণালয় যে ভূমিকা পালন করবে এর ওপর নির্ভর করবে বাকি মন্ত্রণালয়গুলো কতটা জনগণের কাছে সেবা পৌঁছাতে পারবে বা রূপান্তরটুকু মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবে।’
‘এই মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে যে যে সহযোগিতা করা দরকার সেটি করে যাবে। এইটুকু এই মন্ত্রণালয়ের অঙ্গীকার, এই অঙ্গীকারটুকু আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই’-বলেন তিনি।
সরকারের ডিজিটাল রূপান্তরে পেছন থেকে কাজ করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একবার আমাকে এমপি হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার একজন সংসদ সদস্য হওয়ার চেয়ে আপনার প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার সেই অনুরোধ না রেখে চেষ্টা করেছি যাতে তাকে সহায়তা করা যায়।’
মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘এখন এই চ্যালেঞ্জটা আরও বড়, ২০০৯ থেকে এটি অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে। আমি কৃতজ্ঞ যে প্রধানমন্ত্রী আমাকে তার এই মেয়াদকালের শেষ বছরে এমন একটি জায়গায় বসিয়েছেন যেটি আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। এই মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের সবগুলো বিষয়ে আমি এতটা সময় দিয়েছি যে দুনিয়ার আর কোনো বিষয়ে বোধহয় এতটা সময় দেইনি।’
‘আমি গতকাল একটা অপ্রিয় কথা বলেছি, আমি বলেছি আামদের টেলিকম বিভাগের মধ্যে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো খুব জটিল ও জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করা খুব চ্যালেঞ্জিং।’
নতুন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ডাক বিভাগের জায়গাটি তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেই বিষয়টি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। টেলিফোন শিল্প সংস্থা, টেলিটক, বিটিসিএল (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড) নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা এই বিভাগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এ বিষয়ে যে চেষ্টাটা ছিল সেটি আরও জোরদার করে কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি থাকবে।’
মোস্তাফা জব্বার সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি স্পষ্টবাদী মানুষ, আমি সমালোচনা করি ও সমালোচনা সহ্য করতে পারি। আমরা ভুল পথে পরিচালিত হলে আপনারা সংশোধন করে দেবেন।’
এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/জেডএ/জেআইএম