আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের বিষয়ে নতুন ১০ বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। নির্বাচনের আগে থেকেই আলোচনার তুঙ্গে থাকা ট্রাম্পের সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর দ্বিধায় বা সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও। অভিষেকের দিনটিও তার ভালো লাগেনি। হোয়াইট হাউজ নিয়েও তার ভীতি ছিল। সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

Advertisement

সাংবাদিক মাইকেল উলফের লেখা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ’ নামের বইটিতে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। দুইশ’র বেশি সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছেেএ বইটি।

এদিকে বইটি অসত্য আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দিয়ে ভরা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হোয়াইট হাউজের গণমাধ্যম সচিব সারাহ স্যান্ডার্স। তবে বইটির লেখক বলছেন, অভিষেকের দিন থেকে শুরু করে ট্রাম্পের প্রশাসন গভীরভাবে দেখার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। বইটিতে এমন কিছু অভিনব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যে বিষয়গুলো আগে জানা যায়নি।

‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ’ বই থেকে ১০টি বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। সেগুলো হলো-

Advertisement

১. ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে রাশিয়ানদের বৈঠকবইটির তথ্য অনুসারে, হোয়াইট হাউজের সাবেক কর্মকর্তা স্টিভ ব্যানন বলেছেন, ২০১৬ সালের জুনে রাশিয়ার কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে ট্রাম্প টাওয়ারে একটি বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। সেখানে কোনো আইনজীবীকে রাখা হয়নি। ওই বৈঠকে রাশিয়ানরা ট্রাম্প জুনিয়রকে হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে কিছু নেতিবাচক তথ্য তুলে দেন। পুরো ঘটনাটি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো বলে মনে করেন মি. ব্যানন। ‘আমাদের সে সময়েই এফবিআইকে ডাকা উচিত ছিল’ তিনি বলছেন।

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, ব্যাননের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তখন তার মাথাও খারাপ হয়ে গেছে।

২. নির্বাচনে জয় পেয়ে সংশয়ে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পমার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের কিছু পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তার একজন বন্ধুকে বলেছেন, তার বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি ভুত দেখেছেন। মেলানিয়ার চোখে ছিল জল, কিন্তু আনন্দের নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখে স্টিভ ব্যাননের মনে হচ্ছিল, যেন তিনি দ্বিধাগ্রস্ত, হতাশ আর ভীত হয়ে পড়েছেন। তারপর হঠাৎ করেই যেন তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, এটা তার প্রাপ্যই ছিল।

৩. অভিষেকে নিরানন্দ ট্রাম্পমার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের দিনটি উপভোগ করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম সারির বেশিরভাগ তারকা ওই অনুষ্ঠানটি বর্জন করায় তিনি ছিলেন রাগান্বিত, সবকিছু নিয়েই ছিল তার অসন্তোষ। এমনি প্রকাশে স্ত্রীর সঙ্গে তিনি ঝগড়াও করেন। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চোখও যেন জমাট বেধে ছিল অশ্রু। (যদিও এসব তথ্য নাকচ করেছে মার্কিন ফার্স্ট লেডির দফতর।)

Advertisement

৪. হোয়াইট হাউজ নিয়ে ভীত আর উদ্বিগ্ন ট্রাম্পমাইকেল উলফ তার বইয়ে লিখেছেন, হোয়াইট হাউজ নিয়ে উদ্বিগ্ন আর খানিকটা ভীত হয়ে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিজের জন্য আলাদা একটি শয়নকক্ষ বেছে নেন। প্রথমদিনেই তিনি রুমে আরও দুইটি টেলিভিশন আর দরজায় তালা লাগানোর নির্দেশ দেন। যদিও তাতে আপত্তি করেছিলেন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা, কারণ তাদের মতে নিরাপত্তার জন্য এখানেও তাদের প্রবেশাধিকার থাকা দরকার।

৫. ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ইভাঙ্কা ট্রাম্প?ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প তার স্বামী জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে সুযোগ আসলে ইভাঙ্কা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াবেন। তাহলে হিলারি ক্লিনটন নয়, তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।

৬. ট্রাম্পের চুল নিয়ে মশকরাবইটির তথ্যানুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুল নিয়ে মশকরা করতেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প। কারণ তিনি মাথায় খুলিতে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন। যার ফলে তার মাথার কয়েকটি অংশের চুল বিশেষভাবে সাজানো থাকে। তার মাথার চুলের রঙটিও রাসায়নিক কারণে হয়েছে বলে ইভাঙ্কা বলতেন।

৭. হোয়াইট হাউজে সিদ্ধান্তহীনতাডোনাল্ড ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের কাছে হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ কেটি ওয়ালশ জানতে চেয়েছিলেন অগ্রাধিকারের তালিকায় কোন কাজগুলো থাকবে? কিন্তু তার কোনো জবাব দিতে পারেননি মি. কুশনার। উলফ লিখেছেন, পরের ছয় সপ্তাহের মধ্যেও এ বিষয়ে কুশনারের কাছ থেকে কোনো জবাব পায়নি হোয়াইট হাউজের কর্মীরা।

৮. রুপার্ট মারডকের জন্য ট্রাম্পের প্রশাসনবইটিতে মাইকেল উলফ আরও লিখেছেন, নির্বাচনে জয়ের পর একটি অনুষ্ঠানে রুপার্ট মারডকের আসার কথা ছিল, কিন্তু তার দেরি হচ্ছিল। যখন অতিথিরা চলে যাচ্ছিলেন, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের আরও খানিকক্ষণ থাকার জন্য অনুরোধ করেন। বলেন, মি. মারডক পথে রয়েছেন। তার সঙ্গে তাদের দেখা করে যাওয়া উচিত।

৯. ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘গাধা’ বলেছিলেন রুপার্ট মারডকমি. মারডকের জন্য ট্রাম্পের যে ভক্তি শ্রদ্ধাই থাকুক না কেন, তিনি তার প্রতি ততটা সৌজন্য দেখাননি। সিলিকন ভ্যালির নির্বাহীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বৈঠকের আগে রুপার্ট মারডক টেলিফোনে অনুরোধ করেন যে, এইচ-ওয়ানবি ভিসার ব্যাপারটি বিবেচনা করা হয়। মি. ট্রাম্প দেখা যাবে বলে জবাব দিলে তাকে ‘গাধা’ বলে ফোন কেটে দেন মি. মারডক।

১০. ফ্লিন জানতেন রাশিয়া যোগাযোগ কাল হয়ে দাঁড়াবেউলফ লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন, কোনো বক্তৃতার জন্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার ডলার গ্রহণ করা ভালো হবে না। তবে এটা তখনি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, যদি আমরা নির্বাচনে জিতে যাই।

আরএস/আরআইপি