দেশজুড়ে

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

দেশের উত্তরাঞ্চলে এমনিতেই ঠান্ডা বেশি। এরমধ্যে চলতি সপ্তাহে বাড়তে শুরু করেছে শীতের প্রকোপ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সবথেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে তৃণমূল মানুষের। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম বলে জানিয়েছেন শীতার্তরা।

Advertisement

রাজশাহী অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটিই এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস। এছাড়া ভোর থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে পড়ছে ঘন কুয়াশা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমশীতল হাওয়া। এতে কাঁপছে উত্তরের এ জনপদ। বিশেষে করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্ভোগের অন্ত নেই।

সকালে পথের ধারে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে ছিন্নমূল মানুষদের। নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানগুলোয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এদের অনেকেই ঠান্ডাজতিন ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।

Advertisement

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আনোয়ারা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তপমাত্রা। এরপর সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে আসায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে হিমালয়ের হিমেল ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে ঠাকুরগাঁওয়েও। গত ২ দিন সূর্য দেখা গেলেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে অনেক। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ কাজে যেতে না পেরে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।

হিমালয়ের পাদদেশের জেলা ঠাকুরগাঁও। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলা উত্তরের সর্বশেষ জেলা ও হিমালয়র অনেক কাছে হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা প্রতি বছরই বেশি হয়। অন্যান্য বছর নভেম্বরের শেষে শীতের দাপট শুরু হলেও এ বছর জানুয়ারির শুরুতে শীতের দাপট শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শীতের প্রথম আঘাত এটি।

প্রচণ্ড শীতে মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু-পাখিও কষ্ট পাচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত চারদিক কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে। রাতে বৃষ্টির ন্যায় ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে। প্রচণ্ড শীতে সাধারণ মানুষ কাজে যেতে পারছে না। শ্রমিক শ্রেণির এসব মানুষ সন্তান পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। দিনের বেলাতেও মাঝে মধ্যো হেড লাইট জ্বালিয়ে বিভিন্ন যানবাহনকে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

Advertisement

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানিয়েছেন, জেলার শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের জন্য ইতোমধ্যে ৫০ হাজার পিস কম্বল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত কিছু কম্বল ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী কম্বল পাওয়া গেলে হয়তো কিছু মানুষকে শীতের কবল থেকে রক্ষা করা যাবে।

পঞ্চগড়ে দিনরাত শিরশিরি ঠান্ডা বাতাস বইছে। হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের এ জেলায়। সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। মঙ্গলবার থেকে শীতে বিপর্যস্থ হয়ে পরেছেন মানুষজন। বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তারা। রাত ৯/১০টার মধ্যে জনশূন্য হয়ে পড়ছে শহর। দৈনন্দিন আয় কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

জেলা শহরে কোনো আবহাওয়া অফিস না থাকায় সঠিক তাপমাত্রার পরিমাপ জানা যায়নি। তবে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে দুইদিন ধরে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করছে।

শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। পর্যাপ্ত কাথা কম্বলের অভাবে নির্ঘুম রাত পার করছেন তারা। দিনের আলোতেও যাত্রীবাহী যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। বুধবার রাত ৮ পর জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের দোকান পাট বন্ধ করে কাঠের আগুনে উষ্ণতা গ্রহণের দৃশ্য দেখা গেছে। তবে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষায় দুঃস্থ্যদের মাঝে সরকারি বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণের কথা জানায় জেলা প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বৃহস্পতিবার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীতে এখনও শৈত্যপ্রবাহ শুরু না হলেও দেশের পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। রাজধানীতেও তাপমাত্রা ক্রমেই কমছে।

তিনি জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শৈত্যপ্রবাহ বলে গণ্য করা হয়। আজ অথবা আগামীকালই রাজধানী ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ নামার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে হাল্কা কুয়াশা পড়তে পারে। উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। দিনের তাপমাত্রা হালকা হ্রাস পেতে পারে। সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ।

এফএ/আরআইপি