সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এসসিজি) অপেক্ষার প্রহর আর কত দীর্ঘায়িত হবে! কেউ অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের কেউ কী বলতে পারবে, এসসিজির অলক্ষ্যে ক্রন্দন মুছে দিতে পারবে তারা! অ্যাশেজ সিরিজের সর্বশেষ কোন টেস্ট ম্যাচটি সিডনিতে গুরুত্ব নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে? পরিসংখ্যান খুঁজেও বের করা দুষ্কর হয়ে পড়বে।
Advertisement
ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো বের করেছে। অ্যাশেজের সর্বশেষ যে ম্যাচটি এসসিজিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলছিলেন গ্রাহাম গুচ এবং মাইক গ্যাটিংরা। দুই দশকেরও বেশি সময় আগের কথা।
১৯৯৫ সালে সর্বশেষ অ্যাশেজের একটি ম্যাচ সিডনিতে জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যখন সিরিজের জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়নি। সিডনিতেই হয়তো সেটি হওয়ার কথা। টান টান উত্তেজনার সেই টেস্টে অবশ্য ইংল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছিল অস্ট্রেলিয়া। তার আগের দুটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল মেলবোর্ন এবং ব্রিসবেনে। আগের দুই টেস্ট জয়ের পর সিডনিতে ড্র করে অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছিল, অ্যাশেজের সেবারের ট্রফিটা তাদের কাছেই থাকছে। পরের দুই টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল অ্যাডিলেড এবং পার্থে।
সেবারই সর্বশেষ। এরপর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে অ্যাশেজ সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটির জন্য বরাদ্ধ রাখে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। অর্থ্যৎ অ্যাশেজের সমাপ্তিটা ঘটে সিডনিতেই। এরপর থেকে কোনোবারই অ্যাশেজ সিরিজের ফল নির্ধারণ নিশ্চয়তা নিয়ে সিডনিতে টেস্ট শুরু হয়নি। দু’বার পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, যেখানে সিরিজ ড্র হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ১৯৯৯ এবং ২০১১ সালে।
Advertisement
১৯৯৯ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ড জিতলে হতো সিরিজ ড্র। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া জিতে গিয়েছিল। আর ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া জিতলে হতো সিরিজ ড্র; কিন্তু জিতেছিল ইংল্যান্ড। সিডনির ক্রিকেট সমর্থকরা আশাবাদী, একদিন না একদিন অ্যাশেজ সিরিজের নিষ্পত্তি এখানে ঘটবেই। জীবিত সিরিজ নিয়েই অ্যাশেজ পা রাখবে এসসিজিতে।
তবুও, এবারের আসরে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ আগেই জিতে নিয়েছে বলে এসসিজি টেস্ট নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহের কমতি রয়েছে- এমনটা কিন্তু নয়। এর একটাই কারণ, মেলবোর্নে ইংল্যান্ড দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। যেখানে বৃষ্টির কারণে ম্যাচে বিঘ্ন ঘটেছিল এবং শেষ পর্যন্ত আইসিসি এমসিজির উইকেটকে ‘পুওর’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। ইংল্যান্ড ভালো খেললেও, সেখান থেকে ফল বের করে আনা তাদের জন্য ছিল কঠিন। ম্যাচটি ড্রই হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় : ভোর সাড়ে ৫টা) থেকে শুরু হতে যাওয়া সিডনি টেস্টেও হয়তো জিততে পারে অস্ট্রেলিয়া। যা অ্যাশেজে তাদের আধিপত্যকে আরও পোক্ত করে দেবে। কিন্তু ইংল্যান্ডও যে শেষ ম্যাচে জয় পাবে না তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ, মেলবোর্নে অ্যালিস্টার কুক সর্বোচ্চ ২৪৪ রানের যে ইনিংস খেলেছেন, সেটাই ইংলিশদের এখনও স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মেলবোর্নে বলা যায় কুকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ড। এমসিজিতে কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি।
ইংলিশরা ঘুরে দাঁড়ানোর কাজটি করতে পেরেছে ঠিক। তবে আরও একটি প্রশ্নের জবাব হয়তো তারা সিডনি থেকেই ঠিক করে নিতে চায়। সেটা হচ্ছে, দলের অন্য পারফরমারদের ফর্মে ফেরা। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের দলে জায়গা ঠিক রাখতে হলে সিডনিতে পারফরম্যান্স করার বিকল্প নেই। মার্ক স্টোনম্যান এবং জেমস ভিন্স হয়তো প্রথম থেকেই কিছুটা অ্যাকটিভ। বাকিদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মঈন আলি তো ব্যাট এবং বল- দু’ক্ষেত্রেই পুরোপুরি ব্যর্থ। হয়তো শেষ টেস্টে লেগ স্পিনার ম্যাসন ক্রেনকে অভিষেক ঘটাতে পারে ইংল্যান্ড।
Advertisement
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া আছে ফুরফুরে মেজাজে। স্টিভেন স্মিথ তো ২০১৭ সালে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারী। রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। নতুন ওপেনার ক্যামেরণ বেনক্রফটা নিজের জায়গাটা একেবারেই যেন পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। সিডনি টেস্টে সেটা আরও বেশি পোক্ত হওয়ার সম্ভাবনা। একই সঙ্গে উসমান খাজার জন্য একটু পরীক্ষাও বটে এই টেস্ট, নিজেকে প্রমাণ করার!
এসসিজিতে অস্ট্রেলিয়া গত ২০ বছরে মাত্র দুটি টেস্ট হেরেছে। একটি ২০১১ সালে এবং অন্যটি ২০০৩ সালে। দুটিই ইংল্যান্ডের কাছে।
আইএইচএস/জেআইএম